দামুড়হুদার বোয়ালমারীতে মহি ১ টাকায় চা ও পান বিক্রি করেন ৩৩ বছর

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২৩, ২০:১৪

দামুড়হুদা ( চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি

মানবতার সেবায়  সমাজ গড়ি, দানে নয় নিজের টাকা খরচ করে সমাজের ও গ্রামের মানুষের খাওয়াতে যার পছন্দ দামুড়হুদার নাটুদা ইউনিয়নের বোয়ালমারী পশ্চিম পাড়ার কিতব উদ্দিনের ছেলে  মহি উদ্দিন  ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে  ১ টাকায় চা ও পান বিক্রি  করছেন। এই ইফতারের ক্রেতা হলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায়, দুস্থ, ছিন্নমূল, ভিখারি, পথচারী ও বৃদ্ধ ভ্যান ও রিকশাচালকেরা।

১৯৯০ সাল থেকে তিনি চা ও  পান বিক্রি করে আসছেন। তিনি সকাল ও বিকাল থেকে রাত আট টা পর্যন্ত চালান দোকান। শেষ জীবন পর্যন্ত ১  টাকায় চা  বিক্রির  চালাবেন বলে জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  মহি উদ্দিন প্রতিদিনের ন্যায় বিকাল চার টা থেকে ১ টাকায়  চা ও পান  বিক্রি করা শুরু করেছেন।


 চা বিক্রেতা মহি  জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ।  খেটে খাওয়া এসব মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যাদের আয় একেবারে নিন্ম গ্রামের সেই শ্রেণীর মানুষ আমার কাছে এসে চা ও পান খাই।


গ্রামের জাকির হোসেন বলেন,  গ্রামের প্রতিটি চায়ের দোকানে ৫ টার নিচে চা ও পান বিক্রি করে না। তাই  দাম বেশি হওয়ায় এই দোকানে মানুষ ভিড় জমায় চা ও পান  খাওয়ার জন্য।

দোকানে চা ও পান খেতে  আসা বৃদ্ধ  প্রতিবন্ধি চাঁদ আলী   বলেন, ‘অন্য জায়গায় যে চা ও পান খেতে ১৫ - ২০ টাকা খরচ লাগে,   সেই চা ও পান  এখানে এক টাকা দিয়ে খেতে পারছি।

এক টাকায় চা ও পান  খেতে  আসা ভিখারি মরিয়ম বলেন, ‘আমরা সারাদিন অন্যের কাছে হাত পেতে চলি।  চা ও পান  খাবার সামর্থ্য নাই।  এই দোকান এক টাকায় চা ও পান দিচ্ছে তাই এই এলাকায় আসলে এই দোকান থেকে চা ও পান খেয়ে যায়।

চায়ের দোকানী মহি  বলেন, ‘দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে।  ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। দীর্ঘ  ৩৩ বছর  এক টাকায় চা ও পান বিক্রি করে আসছি।  আর্থিক ঘাটতি পূরণে নিজের শখের অনেক দামী জিনিস  বিক্রি করে চা ও পান  বিক্রির কাজ শুরু করি।  আমার ১ ছেলে ও ২ মেয়েকে বিএ পাস করিয়েছি।  আবার মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। আমি প্রতিদিন কামলা খাটি, আর পরের পানের বরজে কাজ করি সেই হিসাবে আমাকে অনেকেই ফ্রি পান দেয় আবার কিনতেও হয়।তবে চিনির দাম বেড়ে যাবার কারণে একটু অসুবিধা হচ্ছে।

মহিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের সুশীল সমাজের মানুষজন। এ বিষয়ে তালসারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন,  মানুষকে বিনামূল্যে নয় বরং ১ টাকায় চা ও পান খাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে যে ব্যক্তিরা চা ও পান  খেতে আসে তারা এই সমাজের নিন্ম আয়ের  মানুষ, যারা দিনমজুর, অসহায় ও দুস্থ।  এভাবে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।’

যাযাদি/এসএস