চৌদ্দগ্রামে আ’লীগ, বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী, একক প্রার্থী নিয়ে মাঠ গোচাচ্ছে জামায়াত

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৬:১৭

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নাভি খ্যাত ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) সংসদীয় আসন। ২৭১.৭৩ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার উপর দিয়ে মহাসড়কের ৪৪ কিলোমিটার সড়ক বয়ে গেছে। ভৌগালিক এবং ব্যক্তি ইমেজের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আসন। এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহচর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, তুখোড় রাজনীতিবীদ কাজী জহিরুল কাইয়ুম বাচ্চু মিয়া। পরবর্তীতে এ আসন থেকে নির্বাচন করে এমপি, মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কাজী জহিরুল কাইয়ুমের সুযোগ্য ভাতিজা, একসময়ের দেশবিখ্যাত শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমেদ, বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক রেলপথমন্ত্রী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুল হক এমপি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, ইফসুর সাবেক মহাসচিব, ডামেকসুর সাবেক জিএস ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের প্রমুখ।   

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) গুরুত্বপূর্ণ এ আসনকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা- কল্পনা আর ভোটের হিসাব।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের এখনো প্রায় ৩-৪মাস বাকী থাকলেও ভোটের মাঠে প্রার্থীতা ঘোষনা করে নেমে পড়েছেন বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ঘটিত এই সংসদীয় আসনটি। এখানে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ মানুষের বসবাস। 

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান, এ আসনে নারী/পুরুষ ভোটার সংখ্যা মোট প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার প্রাায় ২ লাখ, মহিলা ভোটার ১লক্ষ ৯১হাজার এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৩জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১০৭টি’র অধিক। 

এসময়ের আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ১৯৭৩ সালের পরবর্তী এ আসনে ৯টি জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ছয়বার, স্বাধীনতার পরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার, এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন। 

এছাড়াও ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে মরহুম শামছুদ্দিন আহমেদ মজুমদার বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন। যদিও ঐ সংসদের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৫ দিন।
    
বৃহত্তর এ আসনে (তৎকালীন চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট) এমপি নির্বাচিত হন কাজী জহিরুল কাইয়ুম বাচ্চু ও পরবর্তীতে নাঙ্গলকোটের জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে এবং ৯১’র নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে একটানা ১০ বছর এ আসনের কান্ডারী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মরহুম কাজী জাফর আহমেদ। 

১৯৯৬ সালে প্রতিদন্ধীতাপূর্ণ নির্বাচনে দীর্ঘ বছর পর সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক নৌকা প্রতিকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬’র নির্বাচনে মুলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সাবেক এমপি জামায়াত নেতা ডা: তাহেরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। 
৯৬’র নির্বাচনে আ’লীগ নেতা মুজিবুল হক নৌকা প্রতিক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। মুলত; ৯৬’র নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টি চৌদ্দগ্রামে ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয়। 

২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা ডা: তাহের বিপুল ভোটের ব্যবধানে বর্তমান এমপি মুজিবুল হককে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ডা: তাহেরকে পরাজীত করে এ আসনের কর্ণধার হয়ে ২০১৪ সালে,  সর্বশেষ ২০১৮ সালেও সংসদ সদস্য হক মুজিবুল হক।  

ক্ষমতাসীন সরকারী দল আ’লীগে অতিতে বিভক্তি দেখা না গেলেও এবারে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে সভা-সমাবেশ, প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিশেষ কওে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বিভক্তি প্রকট আকার ধারন করেছে। দলীয় দ্বন্ধের প্রকাশ্য রুপ পেয়েছে সর্বশেষ চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। গত পৌর নির্বাচনে সাবেক মিয়র মিজানুর রহমান দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে প্রকাশ্যেই বর্তমান এমপি’র বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক কমিটির সদস্য এম. তমিজ উদ্দিন সেলিম, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রশিদ বুলু এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করায় দলীয় বিভক্তি প্রকাশ্য রুপ পায়। 

সাংসদ মুজিবুল হকের সাথে দলীয় বিরোধী পক্ষের দ্বন্ধ আরও প্রকট আকার ধারন করে গত ৬ই জুন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান গ্রুপের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায়। ঐদিনের সংঘর্ষের ঘটনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত এমনকি জাতীয় সংসদেও বিষয়টি উঠে আসে। 

এছাড়াও সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি দ্বন্ধে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল, ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, আবুল কালাম আজাদ নয়ন, কাজী জাফর আহমেদ, বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শাহিন মজুমদার, কাজী ইকবালসহ উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকজন নেতা মুজিবুল হক বিরোধী বলয়ে অবস্থান নিয়ে বিরোধী শিবিরের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অবস্থান নিচ্ছেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ এলাকায় কর্মী সমর্থক থাকায় এসব কর্মী সমর্থকরাও বিরোধী শিবিরের সাথে কাজ করছেন।  

তবে উপজেলা আ’লীগের দাবী স্থানীয় সংসদ মুজিবুল হক ব্যতিত অন্য যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা ঢাকায় বসবাসকারী নেতা। এলাকার তৃণমূলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ মুজিবুল হক মুজিব। ১৯৮৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত একটানা ৭বার তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ৪বার তিনি ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন। 

এদিকে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়ে ঘোষনা না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক কামাল আবদুল নাছের চৌধুরী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া হাসানের নামও আলোচনায় রয়েছে।  

তমিজ উদ্দিন সেলিম ইতোমধ্যেই কেন্দ্রে একটি শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছেন। চৌদ্দগ্রামে ইতোমধ্যে তার একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বেশ কয়েকবার জনপ্রতিনিধিত্ব করায় তারও একটি নিজস্ব বলয় রয়েছে পুরো উপজেলায়। এর বাইরে সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রীক নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে অবস্থান জানান দিচ্ছেন। 

সাবেক পৌর মেয়রের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়র মিজানুর রহমানের পক্ষে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এছাড়াও বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রশিদ বুলুও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। তিনি জানান, বিগত ২০১২ সাল থেকে চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছি। নেত্রীর নিকট মনোনয়ন চাইবো। নৌকা প্রতীকে নেত্রী যাকে মনোনয়ন প্রদান করেন তার পক্ষেই কাজ করবেন বলেও জানান তিনি। 

এদিকে এক সময় জামায়াতের ভোট ব্যাংক ও ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পাওয়া এ আসনটিতে এবারো মাঠে নামছেন এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের। সাম্প্রতিক সময়ে দলটির জেলা উপজেলার সকল পোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন ডা. তাহের। তবে অনেক মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকায় আব্দুল্লাহ তাহের এবং দলটির উপজেলা  পর্যায়ের নেতারা কুমিল্লায় বসেই গোপনে অধিকাংশ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছেন। এ আসনে জামায়াতের দলীয় ভোট ব্যাংক দলটির অবস্থানকে এগিয়ে রেখেছে।  

এদিকে এ আসনের নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন বিএনপি’রও একাধিক প্রার্থী। ২০১৫ সালের মিয়াবাজারে ৮ মার্ডারের একটি মামলাসহ অসংখ্য মামলার আসামী হয়ে জামায়াতের অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকার বাইরে অবস্থান নেওয়া ও সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে থাকার সুযোগে জোটের প্রধান দল বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী জোটের কিংবা দলের নমিনেশন পাওয়ার আশায় নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। 

নিজেদের বলয়ের কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন, ঘরোয়া কর্মসূচী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন তাদের প্রার্থীতার কথা। বিএনপি’র সমর্থন পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিন জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবীদ কাজী নাছিমুল হক, বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক শিল্পপতি কামরুল হুদা, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. একেএম মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মাছুম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নিয়াজ মাখদুম মাছুম বিল্লাহ, উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরন। 

এছাড়াও মহাজোটের শরিক দল ও সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির মজুমদার, জাতীয় পার্টি (জাফর) অংশ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ এর ভাতিজা কাজি নাহিদ। তারাও নিজ নিজ বলয়ের নেতকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিয়ে প্রার্থীতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন। 
অন্যান্য দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলতের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা কামাল উদ্দিন, এনডিএম’র সিংহ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে সাংবাদিক হাসান মুহা: জহিরের নামও আলোচনায় রয়েছে। 

আওয়ামী লীগ ঃ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একক নেতৃত্বে বর্তমানে চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ অতিতের যে কোন সময়ের তুলনায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে দাবী করেছেন দলটির উপজেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ বাবুল। টানা তিন মেয়াদে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তিনি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ১টি পৌরসভার মেয়রসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। 
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমতুল্লাহ বাবুল যায়যায়দিনকে আরও বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টাকা ৭বার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মুজিবুল হক এমপি। 

জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্তাভাজন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রিয় নেতা মুজিব ভাইকে সংসদের হুইপ, রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেছেন। মুজিব ভাইকে কখনো নিরাশ করেননি নেত্রী। চৌদ্দগ্রামের তৃণমূলের নেতাকর্মী, সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ সদস্য, উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিব ভাইয়ের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মো. মুজিবুল হক এমপির নির্দেশে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে তৃণমূলপর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। টানা তিন মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় ২-১জন মনোনয়ন চাইলেও তৃণমূলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। ঈনশাআল্লাহ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চৌদ্দগ্রাম আসনে নৌকার কান্ডারী মুজিবুল হক এমপিই হবে। 
জামায়াত ঃ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আসনটি আ’লীগের ঘাঁটি হিসেবে স্বীকৃত ছিল। 

কিন্তু ৯০’র দশকের পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লার এ আসনটিতে জামায়াতের উত্থান শুরু হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডাঃ আব্দুল্লাহ মো ঃ তাহেরকে প্রার্থী করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। প্রথম নির্বাচনেই এ আসনে ২৮০০০ ভোট পেয়ে ২য় এবং ৯৬’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯ হাজার ভোট পেয়ে ২য় অবস্থানে থাকেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা ডাঃ তাহের চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১-০৫ সালে চৌদ্দগ্রামে ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, পৌরসভার অনুমোদন, হাসপাতালের শয্যা বর্ধিতকরণসহ চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেন বলে জানান দলটির উপজেলা আমীর। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৮১ হাজার ভোট পেয়েও মুজিবুল হকের কাছে পরাজীত হন। ২০১৪ সালে জোট ভোট বর্জন করায় তিনি সেই নির্বাচনে অংশ নেননি। 

সর্বশেষ ২০১৮’র জাতীয় নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। 
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিরপেক্ষ কিংবা তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেন্দ্রীয় জামায়াতের নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য, চৌদ্দগ্রামের গণমানুষের নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের চৌদ্দগ্রামে থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এসময় তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে ডাঃ তাহের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় নকলের মুলোৎপাটন, ৩৫ কিলোমিটারের শাহ ফখরুদ্দিন সড়কের নির্মাণ, চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীতকরণ, ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, সরকারী হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ৪৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ডাঃ তাহেরসহ উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানী মুলক অন্তত শতাধিক মামলা দায়ের করেন। 

মামলা-হামলার কারণে বর্তমানে ডাঃ তাহেরসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকার বাইরে থাকলেও সংগঠনের কার্যক্রম নিয়মিতই চলছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই সাবেক এমপি ডাঃ তাহের নেতাকর্মীদের নিয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে চৌদ্দগ্রামে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

বিএনপি ঃ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দলটির অবস্থান ভালো না থাকলেও বর্তমানে বেশ কয়েকজন তরুণ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামে বিএনপি একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মরহুম সৈয়দ আহাম্মদ মজুমদার ধানের শীষ প্রতিকে ৮ মতান্তরে ৯ হাজার ভোট পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে গফুর পাটোয়ারী সর্বশেষ ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিয়ে ৬ হাজার ভোট পান। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ৪ দলীয় জোট গঠিত হওয়ায় এ আসনে আর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি দলটি। ২০০১ সালে জোট প্রার্থী ক্ষমতাসীন হওয়ার সুফল হিসেবে বিএনপি’র অবস্থানও সুসংহত হয় উপজেলায়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণই করেন। 

বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি কাজী নাছিমুল হক, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. একেএম মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মাছুম, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামরুল হুদা, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি নিয়াজ মাখদুম মাছুম বিল্লাহ, সাবেক উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণ।   

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা নিয়াজ মাখদুম মাছুম বিল্লাহ বলেন, এদেশের জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, ভাতের অধিকার ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষে মুক্তিকামী সকল মত ও পথের জনতাকে সাথে নিয়ে সরকার পতন আন্দোলন করছে বিএনপি। এই মূহূর্ত্বে সরকার পতন ব্যতিত নির্বাচনের কোন ভাবনাতেই বিএনপি নেই। তবে সরকারের পতন হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌদ্দগ্রাম আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দলীয়ভাবে কিংবা জোটগতভাবে যাকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে তার পক্ষে নির্বাচনের কার্যক্রমে অংশ নেয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। 
  
জাতীয় পার্টি ঃ এক সময়ের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি এ আসনে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে কাজী জাফর পদত্যাগ করে জাতীয় পার্টি (জাফর) গঠন করায় চৌদ্দগ্রামে দলটি আরও ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দুই ভাগে বিভক্ত। দলটির নেতাকর্মীদের একাংশ ধরে রেখেছেন বর্তমান জাতীয় পার্টি’র (এরশাদ) কেন্দ্রীয় নেতা এইচ এন এম সফিকুর রহমান এবং অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর কবির মজুমদার। এ আসনে দুইজনি নাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম কাজী জাফর আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা উনার বাড়ী কেন্দ্রীক কর্মসূচী, ইফতার মাহফিল কর্মসূচীতে দেখা যায় জাতীয় পার্টি’র (জাফর) অপর অংশের কিছু নেতাকর্মীকে। দলটির (জাফর অংশ) বেশ কিছু নেতাকর্মী জানান, এ আসনে মরহুম কাজী জাফর আহমেদের ভাতিজা কাজী নাহিদ জোট থেকে প্রার্থীতা চাইবেন। 

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির মজুমদার জানান, জাতীয় পার্টি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থান অনুযায়ী বিরোধী দল হিসেবে অংশ নিলে চৌদ্দগ্রামেও আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে। আল্লাহ চাইলে আমিও প্রার্থী হতে পারি। 

যাযাদি/ এম