নতুন জাত বারি কাঁঠাল-৬
দেড় বছরেই মিলবে আঠা বিহীন সুস্বাদু কাঁঠাল, পাওয়া যাবে বছর জুড়েই
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১৪:৪৫
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের (বারি) ফল গবেষকদের ঐক্যান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন আরো একটি কাঁঠালের জাত অবমুক্ত হয়েছে। বারি-৬ জাতের এ কাঁঠালের কলম চারা রোপনের মাত্র দেড় বছরে মিলছে ফল। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এ কাঁঠালগাছে সারা বছর ধরে ফল পাওয়া যাবে। গত জুন মাসে জাতটি অবমুক্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড। এ জাত আবিস্কারের পর বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় ফল কাঠাঁল চাষে নতুন দিগন্ত সূচনা হবে ধারনা কৃষি বিজ্ঞানীদের।
বারি’র উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের বিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আম, লিচু, পেয়ারা, লটকন, মাল্টাসহ জনপ্রিয় অনেক ফলের চারা সহজে কলম পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। ফলন আসে এক-দুই বছরের মধ্যে। ফলের জাত, স্বাদ, মিষ্টতা এবং ঘ্রাণও থাকে অটুট। এসব কারণে চাষীরা দিন দিন ওইসব ফল চাষে ঝুঁকছেন। সহজ চাষাবাদ ও ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক দশক ধরে ফলের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে আম। উল্টোচিত্র ছিল কাঁঠালের ক্ষেত্রে। জাতীয় ফল হলেও কাঁঠাল চাষ প্রসারে এতদিন অন্যতম বড় বাঁধা ছিল ‘উন্নত চারা’। কারণ প্রাচীনকাল থেকে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজ থেকে তৈরী চারা দিয়ে। এ পদ্ধতিতে চারা লাগানোর পর গাছে ফলন আসে ৭-৮ বছর পর। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ কখনো ঠিক থাকে না। তাই জাতীয় ফল হলেও এসব কারণে বাণিজ্যিভাবে কাঁঠাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না চাষীরা। এ সমস্যা সমাধানে কঁঠালের কলম ও উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভবনের জন্য শুরু হয় গবেষণা।
বারি কাঁঠাল-৬ এর উদ্ভাবক কাঁঠাল গবেষক বারি’র ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত আগাম জাতের কাঁঠালের মাতৃজাত সংগ্রহ করে কলম চারা উৎপাদনে তারা প্রথম সফল হন ২০০৯ সালে। এতে আশার আলো দেখতে পান তারা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে কৃষি গবেষেণা ফাউন্ডশেনের অর্থায়নে উচ্চফলনশীল বারোমাসী কাঠাঁলের কলম চারা উৎপাদনে শুরু হয় ব্যাপক গবেষণা। সফলতা আসে ২০২১ সালে। চট্রগ্রামের পাহাড়ী এলাকা রামগড় থেকে ১৫টি চারা সংগ্রহ করে প্রদর্শনী মাঠে রোপন করে মাত্র দেড় বছরে ফলন পান ১৩টিতে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ভাবিত বারি-৬ জাতটির গাছ বিস্তৃত ডাল-পালা বিশিষ্ট সতেজ ও সবুজ। অধিকাংশ গাছ দেড় বছরের মাথায় ফলন দানে সক্ষম হলেও দুই বছর পর সব গাছেই ফল আসে। ফলের গড় ওজন ৩.৯৩ কেজি। ফলের উপরের পৃষ্ঠ দেখতে হলুদাভ সবুজ। পাল্প শক্ত, উজ্জল হলুদ বর্ণের ও আঠাববিহীন। এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২৪.৮%। গড় ফলন হক্টেরে ১০.৬ টন। জাতটি উৎপাদনের ফলে চারা রোপনের অল্প সময়ে ফলন আসায় কাঁঠাল চাষে বিপ্লব বয়ে আনবে।
বারি মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছে। যার সর্বশেষ অর্জন বারি কাঠাঁল-৬। এটির স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ চমৎকার। জাতটি উদ্ভবনের ফলে দেশে কাঁঠাল চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল ওরগানাইজেশন (এফএও) এক দেশ এক অগ্রাধিকার পণ্য হিসেবে কাঁঠালকে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছে। কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফল। দেশে প্রায় ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়। যা থেকে বছরে আয় হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কাঁঠালের অপচয় রোধেও কাঁঠাল থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। এতে অনেক উদ্যোক্তাও তৈরী হচ্ছে।
যাযাদি/ এস