মোগল আমলের অনন্য নিদর্শন বজরা শাহী মসজিদ
প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৪০

নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বজরা শাহী জামে মসজিদ। এর মনোরম নির্মাণশৈলী আজও নজর কাড়ে। মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করছে মসজিদটি। নোয়াখালী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। মসজিদটি সোনাইমুড়ী উপজেলার ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের ৩০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে মোঘল মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে তাঁর নির্দেশে ও অর্থে মিয়া আম্বর শাহেবের সহযোগিতায় জমিদার আমান উল্যা খান কর্তৃক ১৭৪১ সালে দিল্লির শাহী মসজিদের অনুকরনে নির্মিত হয় বজরা শাহী জামে মসজিদ।
মসজিদের বহুভাঁজ খিলানোর কোনায় ফুল ও নকশা, আয়তকার খোপের মধ্যে খিলান নকশা, আয়তকার উপরিভাগে পাতা নকশা, পাতার নকশার ওপরে দড়ির মতো উদগত গোলাকার বাঁধনের খোপে ফুল ও লতার নকশা রয়েছে।
এছাড়া দরজায় আয়তকার খোপের ওপর তারা ও বরপি নকশা, টারেটর গায়ের জেব্রক্রসের মতো নকশা বিভিন্ন রঙের পাথর ও তৈজসপত্রের খন্ডিত অংশের সংমিশ্রণে করা হয়েছে। গম্বুজের গায়ে চাঁদ তারা ও পাখা নকশা ছাড়া গম্বুজের একবারে ওপরের দিকে পদ্মের পাঁপড়ি নকশা ও লম্বা চূড়াতে কলসির মতো ধাতব বস্তু স্থাপন করে গম্বুজগুলোকে আর আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
মসজিদটিতে প্রবেশের আগে চোখে পড়বে একটি প্রবেশ তোরণ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৬ ফুট, প্রস্থ প্রায় ৭৪ ফুট এবং মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। মসজিদটিতে ৩টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভিত্তি মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভিত তৈরি করা হয়েছে। তিনিটি গম্বুজই সুদৃশ্য মার্বেল পাথর সুসজ্জিত। মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ৩ টি ধনুকাকৃতি দরজা এবং কেবলার দিকে ৩ টি কারুকার্য খচিত মিহরাব রয়েছে। মসজিদের প্রবেশ পথের তোরণের উপর আরও কয়েকটি গম্বুজ প্রত্যক্ষ করা যায়। মসজিদের দেয়ালে লাগানো শিলালিপি অনুযায়ী ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের দিকে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ এবং খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন মসজিদটি পুরোপুরি সংস্কার করা করেন।
ইমাম হাছান সিদ্দিকী জানান, মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য এ.এইচ.এম ইব্রাহিম ও প্রধান মন্ত্রীর একান্ত সহকারি জাহাঙ্গীর আলম পৃথক পৃথক ভাবে দুইটি ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। সে ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে কিছু অনুদান আসে। এতে সংস্কার এবং সম্প্রসারণ কোনটাই সর্ম্পূন্ন করা সম্ভব হয় নাই। ফলে মুসল্লীদের নামাজ পড়া এবং দক্ষিণ পার্শ্বের গম্বুজ দিয়ে পানি পড়ায় অসুবিধা দেখা দিয়েছে। বজরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরন উদ্দিন বলেন, মোঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন নোয়াখালীতে একমাত্র স্মৃতি চিহ্ন টুকু রক্ষায় বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার করে এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যের প্রয়োজন।
এছাড়া মসজিদের মুসলিমদের ওজু, গোসলের জন্য রয়েছে একটি দীঘি। সব মিলিয়ে মসজিদটি যেন মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতিকে আজো আগলে রেখেছে স্ব-মহিমায়।
যাযাদি/ এসএম