গাজীপুরে জামাইদের মাছের মেলা
৫৫ কেজির পাখি মাছের দাম হাঁকে প্রায় দেড় লাখ টাকা
প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৩

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে এ বছরও পৌষ সংক্রান্ত উপলক্ষে সোমবার জামাইদের জন্য মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাছের মেলাটি যেন জামাইদের মিলন মেলায় রূপ নেয়। মূলত এটা পৌষ সংক্রান্ত জামাইদের মিলনমেলা হলেও সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। এ মেলায় চলে জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা।
মাছ উপলক্ষে গত তিন দিন আগে থেকেই মেলার মাঠে জমতে থাকে নানা নানা পণ্যের পসরা। মাছ বিক্রি ছাড়াও সোমবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আয়োজন করা হয় নানারকম আনন্দ-উৎসবের। দিনটি উপভোগ করতে অপেক্ষায় থাকেন কালিগঞ্জ উপজেলাবাসীসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন। বিনিরাইল, কাপাইস, জাংগালীয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর, জামালপুরের আশপাশের গ্রামসহ যারা এসব এলাকায় বিয়ে করেছেন, সেই সব জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী।
তাছাড়া এ মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতা হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বেশী দামে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। এ মেলায় যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন দেশীয়-বিদেশি মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ দেখার জন্য।
১লা মাঘ সোমবার সকালে সরেজমিন উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা তথা মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
মেলায় উপজেলাবাসী ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ শুধু এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে আসেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
এবারের মেলায় প্রায় ৯ শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছসহ আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরা সাজিয়েছেন। এ মেলায় নদী ও সমুদ্রের বড় বড় চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কৈ কোরাল, কালীবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।
কক্সবাজার থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী শেখ সোহাগ ইসলাম ৫৫ কেজি ওজনের একটি পাখি মাছ ১লাখ ২৭ হাজার টাকা দাম হাঁকেন।
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা স্থানীয় জামাই কামাল হোসেন জানান, মাছটি ৭৫ হাজার টাকা দাম বলেন। তারপরও ব্যবসায়ী মাছটি ছাড়ছেন না।
কামাল জানান, এবারই প্রথম এ মেলায় এসেছি। পাখি মাছটি আমার খুব পছন্দ তাই মাছটি ৭৫ হাজার টাকা বলেছি। টাঙ্গাইলের বাসিন্দা স্থানীয় জামাই আনোয়ার হোসেন এ মেলায় যোগ দেন। য়েলায় ৩০ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ২০ হাজার টাকা দাম বলেন। কিন্তু মাছ বিক্রেতা স্বজল মাছটির এক দাম ৪০ হাজার টাকা বলে দেন। এভাবেই মেলায় জামাইরা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, মেলাটি এখন এই অঞ্চলের উৎসবে পরিনত হয়েছে। মেলাটি প্রআয় আড়াইশ' বছরের পুরনো। বিভিন্ন প্রকার বড় বড় আকারের মাছ কিনতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়৷ মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, মিষ্টান্ন, লোকজ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে মেলাটি মাছের জন্যেই বেশি পরিচিত।
এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫৫ বছর যাবত মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
তারা জানান, মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
তারা আরও জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে এটা সব ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
যাযাদি/ এম