ডাক শুনে দরজা খুলতেই ঝলসে দেয়া হলো মিলির মুখ

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৭

চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে মতলব উত্তরে দুর্বৃত্তদের দেওয়া এসিডে দগ্ধ হলেন মা ও মেয়ে। এদের মধ্যে  অবস্থা গুরুতর। রোববার রাত ১১টায় উপজেলার সুজাতপুর এলাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে। রাত ১টায় পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সফিকুর ইসলাম মানিক নামে এক যুবককে আটক করা হয়। 

এদিকে, ঘটনার পর স্বজনরা এসিডদগ্ধ ২ জনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাদের অবস্থার অবনতি দেখা দিলে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া  হয়।

এসিডদগ্ধদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে  মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, এসিডে মেয়ে মিলি আক্তার (২০)র মুখ, বুক ও পীঠ এবং ডান হাত এবং মা রাশেদা আক্তার (৫৫)র বাম হাত ও উরু ঝলসে গেছে। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে দ্রুত ঢাকায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

প্রথমে দেয়া হয় প্রেমের প্রস্তাব। তা প্রত্যাখ্যান করে পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ের পর মিলি আক্তার শুরু করেন সংসার। এতেও পিছু ছাড়েনি বখাটে মানিক। খুদেবার্তায় দিয়ে আসছিল বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি। যেই কথা সেই কাজ, রাতের আধারে ঘরে ঢুকে অ্যাসিডে ঝলসে দেয়া হয় তার মুখমণ্ডল। 

এমনই এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী ভর্তি রয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কথা হয় ভুক্তভোগী মিলি আক্তারের মায়ের সঙ্গে। হাসপাতালে দুশ্চিন্তার দিন গুণছেন মিলির মা রাশেদা বেগম।

জানা গেছে, খুদে বার্তায় বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছিলো মানিক। এক বার্তায় লেখা হয়, 'হা হা হা
তুই কি মনে করেছিস আমি সব ভুলে গেছি? শুনলাম তুই মা হতে চলেছিস। তুই এক বাচ্চার মা কেন, পাঁচ বাচ্চার মা হলেও তোকে ছাড়বো না। দোয়া করি, বাচ্চা হওয়ার সময় তোর যেনো মৃত্যু হয়। তাহলে মসজিদে ২০ হাজার টাকা দিবো। আর না হয় আমার হাতে তোর মৃত্যু হবে রে মিলি।'

আরেক বার্তায় বলা হয়, ‘আজ থেকে দিন গণনা শুরু কর মিলি।’
 
স্বজনরা জানায়, মিলির মায়ের মনকে শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা জানা নেই কারও। কয়েকদিন আগে চাঁদপুর মতলবে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন সৌদিআরব প্রবাসী সায়েম প্রধানের স্ত্রী মিলি। শবেবরাতের রাতে যখন একই ঘরে মায়ের সাথে নামাজ আদায় করছিলেন, তখনই দরজার কড়া নাড়ে কোনো একজন। "চাচি" "চাচি" বলে মিলির মাকে কয়েকবার ডাক দেন। মিলি নিজে গিয়ে দরজা খুলে দেন। তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই, তার মুখমণ্ডলে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়। চিৎকারে তার মা এগিয়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলে, তার শরীরেও দহন শুরু হয়।

মিলির মা জানান, 'গত একবছর আগে বিয়ে হওয়া মিলিকে নিজ এলাকারই মানিক (বিবাহিত) নামে এক যুবক প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবুও উত্ত্যক্ত করা ছাড়েননি মেয়েকে। মোবাইল ব্যাংকিং করা মানিক সহজেই পেয়ে যায় মিলির ফোন নাম্বার। সেই নাম্বারে খুদেবার্তার মাধ্যমে বড় ধরনের ক্ষতির হুমকি দিয়ে আসছিল প্রতিনিয়ত।'

স্বজনদের অভিযোগ, সেই মানিকই ঘটিয়েছে অ্যাসিড নিক্ষেপের মত ভয়াবহ এ ঘটনা।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, মিলির শরীরে দাহ্য পদার্থের আলামত পাওয়া গেছে। মুখমণ্ডল, গলাসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলছে গেছে। তার গর্ভের থাকা সন্তানও রয়েছে ঝুঁকিতে।

এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম ওরফে মানিক নামে ওই তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে মিলির বাবা মানিককে প্রধান ও বাদল নামের সৌদিপ্রবাসী এক ব্যক্তিকে ইন্ধনদাতা হিসেবে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা দায়ের করেন।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন জানান, এসিড ছুড়ে মারার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ঘটনার দুই ঘন্টার মধ্যে সফিকুল ইসলাম মানিক নামে এক যুবককে আটক করা হয়। যে মিলি আক্তারের বিয়ের আগে তাকে উত্যক্ত করতো।

যাযাদি/ এসএম