মসিক নির্বাচন: সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন, নিবিঘ্নে ভোট দিতে চান ভোটাররা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৯:৪০

আবু সালেহ মো: মূসা, ময়মনসিংহ

আগামীকাল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। এ লক্ষ্যে সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি। সিটির ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে ভোট। এবার দ্বিতীয়বারের মতো সিটির এই নির্বাচনে পাঁচ মেয়রসহ মোট ২২৩ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারণায় নগরী মুখর করে রাখেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সকলেই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এতে ভোটারদের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চান তারা। 

মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের প্রচারণা চোখে পড়েছে ভোটারদের। তাদের একজন মহানগর আ.লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। ঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়াই করা এই প্রার্থী নগরীতে প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি করেছেন। এছাড়াও জেলা আ.লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া) ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি) প্রচারণা চালিয়েছেন বেশ জোরেশোরেই। তবে জনমতে এগিয়ে আছেন সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুই। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি থাকায় সাধারণ মানুষদের সখ্যতা, যে কোনো প্রয়োজনে মানুষের পাশে থাকাসহ নানা কারণে ভোটারদের প্রথম পছন্দ টিটু। 

ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের চা দোকানী চন্দন পাল। ভোটের আগ্রহ নিয়ে মতামত জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আমরা সকলেই ভোট দিতে খুব আগ্রহী। এ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের ৭০ শতাংশ সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু পাবেন বলেও মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে এ চা দোকানী বলেন, টিটুর বিরুদ্ধে যারা আছেন তাদের কারোরই জনসম্পৃক্ততা নেই। তাদেরকে সবাই চেনেও না। অন্যদিকে টিটু নগরের উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মতো চা দোকানিসহ সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন সবসময়। তার সঙ্গে কেউ প্রতিদ্ব›িদ্বতাই গড়তে পারবে না। 

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী রকেট বলেন, চারদিকে ইকরামুল হক টিটুর টেবিল ঘড়ির জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তার পক্ষে প্রচারণায় সকলেই যেভাবে শামিল হয়েছেন এতে স্পষ্টতই বলা যায় আবারও টিটুই মেয়র হচ্ছেন।

অন্যদিকে ভোটাররা চান নির্ভিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরিবেশ। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভোটারদের সাথে কথা বলে ভোট নিয়ে তাদের মাঝে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। আমিনুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, পুরো প্রচারণা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই ভোটের দিনও যেন এমন পরিবেশ বজায় থাকে। তাহলে আমরা সপরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারবো। 

বীর মুক্তিযোক্তা বিমল পাল বলেন, আমি গত ৭০ বছরে এত বেশি প্রচারণা কখনো দেখিনি। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাজ সাজ রব উঠেছে। এতে ভোটার উপস্থিতি অনেক বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।

থাকবে বাড়তি ইভিএম মেশিন: 

শুক্রবার দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম। বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে ৭টি বুথ থেকে ইভিএম বিতরণ করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। ১৩৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ ইভিএম বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ১২৮ টি ভোট কেন্দ্রের ৯৯০টি ভোট কক্ষের জন্য দেড় হাজার ইভিএম মেশিন থাকবে। প্রায় ৫০০ ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে কেন্দ্রগুলোতে। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে যেনো ভোট বিলম্ব না হয় সে কারণে বাড়তি ইভিএম রাখার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বড় ধরণের কোনো সংঘাতের আশঙ্কা দেখছিনা। আচরণবিধির ক্ষেত্রে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থীদের বলা হয়েছে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘনকরলে প্রয়োজনে প্রার্থীতা হারাতে পারে তারা। মেয়র, পুরুষ ও নারী কাউন্সিলর থাকায় প্রচারে ত্রিমুখী ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। সে কারণে ভোটার বাড়বে আশা করা হচ্ছে।

সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে

নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোটড়গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সব ভোট কেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার মিলে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া থাকবে মোবাইল টিম, স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিজিবি ও র‌্যাব। 

ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়ে রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১ জন ম্যাজিষ্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। ১৫৩৬ জনের আনসার, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১৭ টিম র‌্যাব কাজ করবে। সকলের অংশগ্রহণে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। 

এবারের নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হবে। সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন।

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোটগ্রহানের দিন নির্ধারণ করে তপশিল ঘোষণা করেছিল ইসি। যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে কেবল কাউন্সিলর পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

যাযাদি/ এসএম