হিজলায় আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধার

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩৪

হিজলা প্রতিনিধি

বরিশালের হিজলায় জামাল মাঝি (৫২) নামে  স্থানীয় এক আ্ওয়ামী লীগ  নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর  তীরবর্তী  সৈয়দ আলী রাঢ়ীর সয়াবিন খেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।   জামাল মাঝি  ধূলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর পালপাড়া ওয়ার্ড   আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং  একই গ্রামের  আবদুল কাদের মাঝির ছেলে।  তিনি মেঘনাঘাটে মাছের ব্যবসা করতেন।

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  জুবাইর আহমেদ বলেন,  শনিবার  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেঘনা তীরবর্তী একটি সয়াবিন খেত থেকে জামাল মাঝি নামে ওই ব্যক্তির লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে লাশ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।  

 পুলিশ ও স্থানীয়  ব্যক্তিরা  জানান,  নিহত জামাল মাঝির গলাসহ বুকে একাধিক কোপের আঘাত রয়েছে।  তবে যেখানে মরদেহ পাওয়া গেছে সেখানে কোনো রক্তের চিহ্ন নেই। পুলিশ ধারণা করছে, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারন, যেখানে লাশ পড়েছিল সেখানে রক্তের কোনো দাগ নেই।   অন্য কোথায় নিয়ে তাঁকে হত্যা করে লাশ ওই স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

তবে  বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ)  আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ শনিবার সকালে যায়যায়দিন কে বলেন,  জামাল মাঝি তাঁর অনুসারী। সংসদ সদস্য  পংকজ নাথ অভিযোগ করেন, গত  ২ মার্চ হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাল মাঝির বাড়িতে হামলা করেন  স্থানিয় ধুলখোলা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী ও তাঁর  ৪০-৫০ জন সহযোগী । তারা জামাল মাঝিসহ পরিবারের সাত সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন। পরে জামাল মাঝির ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় জড়িত সাইফুল ইসলাম নামে  জামাল ঢালীর এক অনুসারিকে  শুক্রবার পেয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনার পর হিজলা থানার  পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ  তাঁর অনুসারীদের ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু করে। দুই জনকে গ্রেপ্তারও  করা হয়।

সংসদ সদস্য পংকজ নাথের অভিযোগ পুলিশের ধড়পাকড়ের কারনে তাঁর অনুসারীরা এলাকা ছাড়া হয় এবং জামাল মাঝি একা ছিলেন। এই সুযোগে তাঁকে  ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী ও তাঁর লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে।

পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ১৫ দিন ধরে ধুলখোলা ইউনিয়নে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত ১৫ দিনে থানা ও আদালতে পাঁচটি মামলা করেছে একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে সাইফুল নামে  একজনকে মারধর করে গুরুতর আহত করার  খবর পেয়েই এলাকায় গিয়ে দেখি দুইপক্ষ সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছে। তখন দুই পক্ষকে  তাড়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ই।  সেখান থেকে দুজনকে   গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই পক্ষকেই নিবৃত্ত করা হয়েছে। তবে রাত ৩ টা পর্যন্ত  সেখানে  দুপক্ষই  দেশীয় অস্ত্রসহ  এলাকায় অবস্থান করছিল।   পুলিশ কোনো পক্ষের হয়ে  কাজ করেনি। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে।

নিহত জামাল মাঝির  স্ত্রী আঁখি বেগম শনিবার বিকেলে  বলেন, শুক্রবার দিবাগত  রাতে  জামাল মাঝি  বাড়ি না ফেরায় রাত  ২টার দিকে তাঁর বড় মেয়ে আইরিন  তাঁর বাবা  জামাল মাঝির মুঠোফোনে কল দেয়। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, মা আমি ভালো আছি ও নিরাপদে আছি। এরপর  শনিবার সকাল ৯টার দিকে  এলাকার লোকজনের কাছে জানতে পারি আমার  স্বামীর লাশ সয়াবিন খেতে   পড়ে আছে।

আঁখি বেগমের অভিযোগ, ধুলখোলা  ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ঢালীর নেতৃত্বে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী স্বামী জামাল মাঝিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে।  ইউপি চেয়ারম্যান  জামাল ঢালী  এই আসনের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের অনুসারী।

জামাল ঢালী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুক্রবার  ধুলখোলায় একটি মারামারি হয়েছে। সংসদ সদস্য পংকজ নাথের অনুসারী  কালাম ব্যাপারীর লোকেরা সাইফুল নামে এক ব্যক্তির হাত পা- ভেঙে দিয়েছে।  সাইফুল আমার কর্মী তাই তাঁকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত ছিলাম। সকালে আমার চৌকিদার এসে জানায়, সয়াবিন খেতে কে বা কার যেন লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে আমি সেখানে চৌকিদার পাঠাই এবং জানতে পারি জামাল মাঝি নামে  এক ব্যক্তির লাশ ওখানে পড়ে আছে। তবে কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমি জানিনা।  

জামাল ঢালী  বলেন,  ২০২১ সালে  দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নে  সংসদ সদস্য পংকজ নাথের এক অনুসারী সাইফুল নামে এক ব্যক্তিকে তাঁরা নিজেরাই  হত্যা করে  আমাদের ফাঁসাতে চেয়েছিল। পরে পুলিশের উচ্চতর তদন্তে এটা বের হয়ে আসে এবং পরে মূল হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়েছিল। আমাদের ধারণা,  এই হত্যাকাণ্ডটিও  সে ধরনের  পরিকল্পিত একটি  হত্যাকাণ্ড। একইভাবে ২০২৩ সালে মনিরা আক্তার নামে এক নারী আত্মহত্যা করার পর সেই ঘটনায় আমি ও আমার অনুসারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করানো হয়েছিল। পরে পিবিআই তদন্তে ওই মামলাটিও মিথ্যা প্রমানিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদেরকে ফাঁসাতে এমন  ঘটনা  হতে পারে বলে আমি মনে করি। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করার জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্কলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  জুবাইর বলেন, জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে  ধুলখোলা ইউনিয়নে একাধিকবার সংর্ঘষ হয়েছে।তাদের নিয়ন্ত্রন করার সর্বোচ্চ  চেষ্টা করেছি।  প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারনা,  জামাল মাঝিকে  কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।তদন্তে করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/এসএস