মরু মিয়ার ১০ বছরে ২১ বিয়ে

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

একটি, দুটি কিংবা তিনটি নয়, ২১টি বিয়ে করেছেন নওগাঁয় মরু মিয়া (৩৫) নামে এক যুবক। ১০ বছরে ২১টি বিয়ে করে এলাকায় রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন এই যুবক। 

মজার বিষয় হলো মরু মিয়ার যাদেরকে বিয়ে করেছেন তারা সবাই তার চেয়ে বয়সে বড়। কোন কোন বউকে বিয়ে করেছেন সন্তানসহ। বর্তমানে তার সাথে তিনটি বউ থাকলেও বাকি বউয়েরা কোথায় আছেন জানেন না তিনি।

মরু মিয়া নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

জানা যায়, মরু মিয়া বাবা কাজ করতেন বয়লারে (ধানের চাতাল)। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই তিনি বয়লারে বেড়ে উঠেন। এরপর মরু মিয়া বড় হলে তিনিও যোগ দেন সেই পেশায়। সেই কাজের ফাঁকে  প্রায় দশ বছর আগে পরিবারের পছন্দে প্রথম বিয়ে করেন মরু মিয়া। এরপর নানা ঘটনায় একের পর এক বিয়ে করতে থাকেন তিনি। প্রতিবার বাড়ি আসার সময় বউ পরিবর্তন করে আসতেন। এলাকাবাসী সেসব নারীদের পরিচয় জানতে চাইলে নতুন বিয়ে করা স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করে দিতেন। তার এমন ঘটনায় এলাকায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। বর্তমানে মরু মিয়া শেষ স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন ভ্যানযোগে মান্দা ও রাজশাহীর বিভিন্ন হাট-বাজারে সাহায্য চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

২১টি বিয়ে করার বিষয়ে মরু মিয়ার জানান- কোন ওষুধ বা বশ করে নয়, তাকে দেখলেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যেতেন নারীরা। কোন নারী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মন খারাপ করবেন ভেবে না বলতেন না। এরপর চলতি পথেই কোন মৌলভীকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিয়ে পড়ে নিতাম। কিছুদিন সংসার করার পর যেখানে বিয়ে সেখান থেকেই বাদ দিয়ে দিতাম। কোন কাবিননামা না থাকায় কোন স্ত্রী আইনি প্রক্রিযায় যেতে পারে না বলেও জানান তিনি।

মরু মিয়া বলেন- এখনো পর্যন্ত ২১টি বিয়ে করেছি। সর্বশেষ বিয়ে করেছি আদিবাসি এক নারীকে। তবে সব বইয়ের নাম মনে না রাখতে পারলেও ৮টি বইয়ের নাম তিনি মনে রাখতে পেরেছেন। তারা হলেন- শহিদা, নার্গিস, সেলিনা, আলেয়া, তারা, জোসনা, রাবেয়া ও পারুল। যাদেরকে বিয়ে করেছি তারা সবাই এক বাচ্চা বা দুই বাচ্চার মা। আমাকে দেখার পর তারাই বিয়ে করে। আমার থেকে বয়সে বড় হওযায় আমি তাদেরকে কিছু বলতেও পারি না। এইভাবে এখনো পর্যন্ত ২১টি বিয়ে করেছি। এখন তিনটি বউ এক সাথে একই বাড়িতে আছে। তবে সবাই আলাদা আলাদা থাকেন।

এই মরু মিয়া আরও বলেন- প্রায় দুই বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনা পায়ে আঘাত পান। এরপর থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেন। কোন ভারি কাজ করতে পারেন না। সেসময় শেষ বউ ছাড়া কেউ সেবা যত্ন না করলে নিয়ত করেন আরও কোন বিয়ে করবেন না এবং কেউ যেন কখনও তার মতো এতগুলো বিয়ে করে ভুল না করে সেই কথাও জানান।

বর্তমানে মরু মিয়া শেষ স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন ভ্যানযোগে মান্দা ও রাজশাহীর বিভিন্ন হাট-বাজারে সাহায্য চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায় সরকারি ভাবে ঘর করে দেয়ার দাবি জানান মরু মিয়া।

তার শেষ স্ত্রী তারা ঢাকা মেইলকে বলেন- মোবাইলে আমার সাথে তার (স্বামী) যোগাযোগ হতো। এরপর বিয়ে হয়। আমি বিয়ে হয়ে এসে দুই বউকে এই বাড়িতে দেখেছি। আমরা বোনের মতোই এখনো মিলেমিশে থাকি। তবে একসাথে থাতকে গেলে দুকথা হলে পরে আবার আমরা আমরা ঠিক হয়ে যাই। কেউ কাউকে হিংসা করি না।


তবে তার প্রথম স্ত্রী শহিদা অভিযোগ করেন বলেন- বিয়ের পর থেকেই ভরন পোষন দেওয়া বন্ধ করে দেয় মরু মিয়া। অনেক কষ্ট দেয়। সন্তানদের কোন দেখা শুনা করে না।

স্থানীয় আব্দুল গফুর বলেন- মরু প্রথমে তার বাবার ইচ্ছেয় প্রথম বিয়ে করেন। এরপর স্ত্রী রেখে বয়লারে (ধানের চাতাল) চলে যায়। এরপর বাড়ি আসলেই একটি করে মেয়ে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসা করলে বলে স্ত্রী হয়। তবে মেয়ে গুলোকে দেখলে মনে হয় মরুর মায়ের চেয়ে বয়স বেশি। তবে বর্তমানে মরু বিভিন্ন হাট-বাজারে সাহায্য চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করায় তাকে সরকারিভাবে সহায়তার দাবি জানান তিনি।

সিরাজুল ইসলাম বলেন- একাধিক বিয়ে করা যায় কিন্তু সেটার জন্য দেশে আইন আছে এবং সামর্থ অনুযায়ী। এগুলো সমাজের খুবই খারাপ এবং এলাকাবাসীর জন্য ক্ষতিকর।

যাযাদি/ এস