বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটা নিরস্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৩

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটা নিরস্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে এবং জাতি প্রস্তুত হয়ে যায় যে যুদ্ধ করেই এদেশ স্বাধীন করবো। বঙ্গবন্ধুর আহবানে আপনারা আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশকে হানাদার মুক্ত করেছিলাম। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তাঁদেরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছিলাম। পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ আমরা ছিলাম অর্থাৎ বাঙালিরা। পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা  ভাষা উর্দু। ৫৬ ভাগ মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা উপেক্ষিত হলো। সেই দিনই পাকিস্তান আন্দোলনের তরুণ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ মুজিব । উপলব্ধি করেছিলেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে ছিলেন যে পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠীর শাসন শোষণের পরিবর্তে আমরা পাঞ্জাবি শাসন শোষণ পেয়েছি। 

মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের হল রুমে ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্রেনি্ ইংন্টারন্যাশনাল লিমিটেড জেবি কিবরিয়া ফ্লিমস কর্তৃক আয়োজিত বীরের কণ্ঠে বীরগাথা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

এছাড়াও তিনি বলেন, বাঙালির ইতিহাস ৪৮ সালের ছাত্রলীগ এবং ৪৯ সালে জেলখানায় থাকাকালীন সময়ে ২৩ শেখ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে ছিলেন। একটা কথা শুধু ভাবেন পাকিস্তানি ২৩ বছরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কোন উন্নয়ন হয়নি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলে যে রেললাইন ছিল তার অনেকগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পারে তো নাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট এগুলো কিছুই হয় নাই। আমরা সোনালী আঁশ পাট ও চা বিক্রি করে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ ভাগ পূর্ব পাকিস্তান উপার্জিত হতো আর পশ্চিম পাকিস্তান পুরা বিক্রি করে বিশ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো আর খরচ করার সময় ১৮ ভাগ আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের এবং ৮২ ভাগ পাকিস্তানের খরচ করা হতো। কোন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী বাঙালি পাকিস্তান আমলে একজন সচিব হয় নাই একজন রাষ্ট্রদূত হয় নাই সেনাবাহিনীতে কর্নেল এ ধরনের কোন পদো পায় নাই। এরকম কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আমাদের অঞ্চলের লোকজন বিশ ভাগের ও কম ছিল অথচ আমাদের অঞ্চলের জনসংখ্যা বেশি ছিল।

এই সমস্ত অত্যাচার শোষণ বঞ্চনার কারণেই সেই সময়কার তরুণ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙ্গালীদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন । ছয় দফা মুক্তির সনদ হিসেবে দেন বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফা দেওয়ার কারণে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর জন্য তার বিরুদ্ধে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছিল। যা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সে আগরতলার কেস বাতিল হয়েছে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছে।

আইয়ুব খানের পতন হলো ইয়াহিয়া খান নির্বাচন দিলেন । ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করলো। মেজরিটি আসনে জয়লাভ করার পরেও ৭১ সালে জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা দেয় নাই টালবাহানা শুরু করলো। এক কথায় তারা বাঙ্গালীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। সেই প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে দূরধর্ষ সেনাবাহিনী ছিল পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাঙ্গালীদের উপহাস করে আইয়ুব খান বলেছিলেন নন মার্শাল রেইস এরা যুদ্ধ করতে জানে না এরা ছোটখাটো সাইজের এরা ভীতু কাপুরুষ এরা বাঙ্গালীদের কে সেনাবাহিনীতেও নেয়নি। সেই বাঙালি নিরস্ত্র জাতি সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত হলো।

আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের যে অভিজ্ঞতার কথা রেকর্ড  করা হচ্ছে তা হলো পাকিস্তানের আমলে আপনারা কেমন ছিলেন, কেন যুদ্ধে গিয়েছিলেন, আপনারা চাইলেন আর নয় মাস যুদ্ধ হলো দেশ স্বাধীন হলো, এটা ঘটনার ছিল না। মুলত আমরা অত্যাচার অবিচার শাসন শোষণের বঞ্চনা থেকে বাঁচার জন্যই আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। সেই কথাগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কথা থেকে উঠে আসতে হবে। কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে গেলেন, কি কষ্ট করে গেলেন ,কি খেলেন, খাওয়ার পানি পাওয়া যেত না, গোসলের তো প্রশ্নই উঠে না, কিভাবে ট্রেনিং দিলেন সে কথাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটাই হলো ইতিহাস। নয় মাস কি করেছেন কিভাবে ক্রেডিটটা নিলেন। এটা বলতে হবে এটাই ইতিহাস। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা রেকর্ডিং করা হচ্ছে ইতিহাস তৈরি হবে। আপনারা যদি ঠিক মতো বর্ণনা না দিতে পারেন তাহলে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কি লাভ । আর এই ইতিহাস পড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে বাংলাদেশ কিভাবে স্বাধীন হলো এবং পৃৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বীরের কণ্ঠে বীরগাথা প্রকল্পের পরিচালক ও উপ সচিব আফরাজুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্রেটারী (পিএস) মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাতেম আলীসহ অন্যান্যরা।

যাযাদি/ এসএম