অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে জীবন গেল ইতালী প্রবাসীর।            

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৭

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

ইতালী প্রবাসী মোঃ বাচ্চু শেখ হত্যাকান্ডের তিন বছর পরে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত। পিবিআই,র হাতে গ্রেফতার হবার পরে আদালতে হত্যাকারিদের স্বীকারউক্তিমুলক জবানবন্ধী।

জানাগেছে, ইতালী প্রবাসী  মোঃ বাচ্চু শেখ ছুটিতে বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি গত ইং-০৮/০৩/২০২১ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করে রওনা দিয়ে গত ইং-০৯/০৩/২০২১ তারিখ ভোর অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পৌছায়। 

সেখান থেকে ভিকটিম বাচ্চু শেখ তার সাথে থাকা মালামাল নিয়ে আব্দুল্লাহপুর বাস কাউন্টারে আসেন। তিনি তার বাড়িতে পৌছানোর জন্য হানিফ এন্টারপ্রাইজ এর ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী বাস নং-ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৫৯৯৩ দুইটি টিকেট অ-৩, অ-৪ ক্রয় করেন। 

সকাল অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় বাসটি বরিশাল এর উদ্দেশ্যে রওনা করে। তার সিটের পাশে অ-২, ই-১, ই-২ সিটে অজ্ঞাতনামা ৩ জন যাত্রী ছিল। ভিকটিম বাচ্চু এর সাথে বাংলাদেশের কোন সিম না থাকায় পাশের সিটে থাকা অজ্ঞাতনামা যাত্রীর মোবাইল নম্বর থেকে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে তার অবস্থান পাটুরিয়া ফেরী ঘাটে বলে জানান। 

বিকাল অনুমান ০৪.১০ ঘটিকার সময় ওই যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার মোঃ মিরাজ খান ভিকটিমের স্ত্রীকে ফোন করে জানায় যে, তার স্বামী বাসের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষনা করেন।

এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্স এর আদেশে পিবিআই, গোপালগঞ্জ অত্র মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে এসআই(নিঃ)/মোঃ ফিরোজ আহমেদকে নিযুক্ত করা হয়। 
পিবিআই প্রধান জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক দিক নির্দেশনায়, জনাব মোঃ ইলিয়াছ শরীফ, বিপিএম (বার), পিপিএম, ডিআইজি (পশ্চিমাঞ্চল), বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা এবং জনাব মোঃ ওয়ালিদ হোসেন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি, (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ), বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা এর তত্ত¡বধানে ও পিবিআই গোপালগঞ্জ জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্তে¡ তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ) মোঃ ফিরোজ আহমেদ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরে গত ইং ০৫/০৩/২০২৪ খ্রি. জনৈক মোঃ কামাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইর গোপালগঞ্জ জেলা অফিসে নিয়ে আসেন। 

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোঃ কামাল হোসেন অত্র মামলার বিষয়ে গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী আমির হোসেনসহ ০৩ (তিন) জন আসামীকে সনাক্ত করা হয়। আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে আরো চাঞ্চলকর তথ্য বেরিয়ে আসে। 

আসামীরা জানায় ১৩/০৪/২০২৪ খ্রি. দুবাই প্রবাসী  জনৈক মাইনুল (৩৬) এর সাথে বাসের মধ্যে সখ্যতা তৈরি করে যাত্রীকে বিস্কুট ও ডাবের পানি খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করলে উক্ত যাত্রী ও বাসের লোকজন আসামী আমির হোসেনকে মারপিট করে কুমিল্লা সদর থানায় সোপর্দ করে । কুমিল্লা সদর থানায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে আদালতের মাধ্যমে আসামী আমির হোসেনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। অত্র মামলাটি তদন্তকালে এই মামলার ঘটনার সাথে আসামী আমির হোসেনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় উক্ত আসামীকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত আসামীর ০৩ (তিন) দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

প্রাথমিক তদন্তকালে জানা যায় যে, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার ভিমেরপাড় (মাহিলারা),  গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে - আসামী আমির হোসেন (৫০), পিতা-, - থানা-, অজ্ঞান পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য। সে এ পেশার সাথে আনুমানিক ১২-১৩ বছর যাবত জড়িত আছে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে চুরি সংক্রান্তে ১০/১২ টি মামলা আছে। তারা আরো জানায় সে এবং তার দলের সদস্যরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিমান বন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের টার্গেট করেন এবং তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে কৌশলে বিস্কুট এর মধ্যে চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে অজ্ঞান করে যাত্রীদের নিকট থাকা মালামাল চুরি করে থাকেন। 

আসামী আমির হোসেন ও তার সঙ্গিরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ইং ০৯/০৩/২০২১ খ্রি. অত্র মামলার ভিকটিম ইতালি ফেরত মোঃ বাচ্চু শেখকে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে টার্গেট করে আব্দুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে ঢাকা-বরিশাল রুটের হানিফ পরিবহন বাসে উক্ত ভিকটিমের পাশের তিনটি সিট ক্রয় করেন। আলাপচারিতার মাধ্যমে ভিকটিম বাচ্চু শেখের সাথে আসামী আমির হোসেন ও তার সঙ্গীদের সখ্যতা তৈরী হয়। পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসার পরে আসামী আমির হোসেন ফেরীঘাট হতে এক প্যাকেট বিস্কুট ক্রয় করে, বিস্কুট এর মধ্যে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিম বাচ্চু শেখকে খেতে দেন। 

বিস্কুট খাওয়ার অনুমান ৩০-৪০ মিনিট পর ভিকটিম বাচ্চু শেখ অজ্ঞান হয়ে পড়লে, আসামী আমির হোসেন ও তার সঙ্গীরা ভিকটিম বাচ্চু শেখ এর সাথে থাকা মালামাল নিয়ে কৌশলে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ মোড়ে নেমে পড়েন। 

পরবর্তীতে বাসের সুপার ভাইজার ভিকটিম বাচ্চু শেখকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গোপালগঞ্জ জেলার, মুকসুদপুর থানাধীন, ছাগলছিড়া গ্রামের, ১৪নং ব্রিজের কাছে ভিকটিমের স্ত্রী এর নিকট বুঝিয়ে দিয়ে বাসটি বরিশালের দিকে চলে যায়। ভিকটিম বাচ্চু শেখের এই অবস্থা দেখতে পেয়ে তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম ভিকটিমকে প্রথমে রাজৈর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিমকে দ্রæত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে ভিকটিমকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিম বাচ্চু শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এই ঘটনায় বাচ্চু শেখের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মুকসুদপুর থানায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামী আমির হোসেনকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।  


যাযাদি/ এম