ভোলার উপকূলে রাসেল’র ভাইপারের আতঙ্ক

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ১৪:৩৬

স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা
ছবি-যায়যায়দিন

দ্বীপ জেলা ভোলায় হঠাৎ করে দেখা মিলছে বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপারের। ছড়িয়ে পরছে একের পর এক উপজেলায়। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন উপজেলার নদীর র্তীরে, বসত-বাড়ি, ফসলের মাঠ ও রাস্তা থেকে উদ্ধার হচ্ছে এই ভয়ংকর সাপটি। এতে করে আতঙ্কিত ভোলার নদীর পাড়ে ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ।

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করেই ক্লিনিং মেশিন নামে খ্যাত রাসেল’র ভাইপারের দেখা মিলছে। একে একে জেলার সাত উপজেলা থেকেই ধরা পরছে এই রাসেল’র ভাইপার। 

এরমধ্যে কারো বাড়ি, রান্নার ঘর, ফসলি জমি, সড়ক, নদীর র্তীরে সিসি ব্লাক বাঁধ ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের এলাকা থেকে এপর্যন্ত ছোট ও বড় মিলে প্রায় ২০ টির মত রাসেল’স ভাইপার সাপ উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। এরমধ্যে বেশি ভাগ সাপকে পিটিয়ে হত্যা করে মানুষ। আর ১/২টি জীর্বিত উদ্ধার  করে বন বিভাগের মাধ্যমে অবমুক্ত করা হয়।

এদিকে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ার পাড়ে  ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বসবাস করা মানুষের মাঝে বিষধর সাপ রাসেল’র ভাইপারের আতঙ্ক বিরাজ করছেন।

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো: সিরাজ মাঝি জানান, তারা মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীর্বিকা পরিচালনা করে আসছেন। আর দীর্ঘ অনেক বছর ধরে তারা নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট সংলগ্ন মেঘনার পাড়ের সিসি ব্লাক বাঁধের বসে জাল মেরামত করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত রোববার বিকেলের দিকে সিসি ব্লক বাঁধের পাশে একটি বিষধর সাপ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে মৎস্য ঘাটে নিয়ে আসি। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে বলেন এটি ভয়ংকর বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। এরপর স্থানীয়রা এটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।

ইলিশা ইউনিয়নের জংশন এলাকার ব্যবসায়ী মো : নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মো: রাসেদ জানান, তা‌দের এলাকা থে‌কে ক‌য়েক‌টি রা‌সেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হ‌য়ে‌ছে। শুনেছেন রাসেল ভাইপার একটি ভয়ংকর বিষধর সাপ। এটি কাউকে কামড় দিলে মানুষ মারা যায়। তাই আমরা যারা নদীর পাড়ে ব্যবসা করি তার রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে চিন্তিত আছি।

দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: কবির শিকদার জানান, তারা বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের বসবাস করছেন। সেখানেও কয়েক দিন আগে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। যার কারণে আমরা চরাঞ্চলের বসবাস করা মানুষ খুবই দুচিন্তায় আছি।

তারা আরো জানান, সাপের ভ্যাকসিন শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সদর হাসপাতালে আছে। আর আমাদের এখান থেকে হাসপাতালে যেতে ২/৩ ঘন্টা সময় লাগে। তাই যদি আমাদের মদনপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে এর ভ্যাকসিন থাকতো তাহলে কাউকে সাপে কামড় দিলে সহজে ভ্যাকসিন দিতে পারতো।

ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রাসেলস ভাইপারের বাসস্থানে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এগুলো এখন বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে। আর রাসেল ভাইপার কাউকে সহজে কামড় দেয় না। মানুষকে সাপ হত্যার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, শীত মৌসুমে এগুলো আবারও তার বাসস্থানে ফিরে যাবে।

ভোলা সিভিল সার্জন ডা: কেএম শফিকুজ্জামান জানান, বর্তমানের সদর হাসপাতালসহ সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। সাপে কামড়ের সাথে সাথে হাসপাতালে আসার অনুরোধ করেন। এছাড়াও তিনি সবাইকে সাবধানে থাকার পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ও আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও পরামর্শ দেন।

যাযাদি/ এস