মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

মাদারীপুরে মসজিদ নির্মাণ করে হিন্দু জেল সুপার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন

মনজুর হোসেন, মাদারীপুর
  ০২ আগস্ট ২০২৪, ২৩:১৬
ছবি : যায়যায়দিন

নামাজ পড়া একটি ধর্মীয় কাজ। যে কোন ধরনের কাজ করার সময় নামাজের সময় হলে মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে যায়। নামাজের জন্য পবিত্র ও সুন্দর একটি স্থান লাগে। আর সে সুন্দর ও পবিত্র স্থান হলো মসজিদ। কারাগারে আটক থাকা বন্দিদের স্বজন ও কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এলাকাবাসীর নামাজ আদায়ের জন্য জেল সুপার তুহিন কান্তি খান কারাগারে প্রবেশের পূর্বেই রাস্তার পাশে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সফল হয়েছেন সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করে।

মাত্র চার মাসেই মসজিদটির সকল কাজ প্রায় সম্পূর্ন করেছেন। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা। মসজিদটিতে একত্রে প্রায় দুইশত পঞ্চাশজন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবে। নতুন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে মসুল্লিরা খুবই আনন্দিত। মসজিদ নির্মাণের ফলে বন্দিদের স্বজন, কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকার সাধারন মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন জেল সুপার।

জানা গেছে, মাদারীপুরে প্রথম কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ সালে। তখন কারাগারটি ছিল শহরের শকুনী লেকের পূর্ব পাড়ে পুলিশ লাইনের পাশে। কারাগারটি এখন পুরাতন হওয়ায় এবং আকার ছোট হওয়ায় বন্দিদের থাকতে কষ্ট হয়। সে জন্য ২০১৮ সালে মাদারীপুর শহরের পাশে ঘটমাঝি এলাকায় সাড়ে ১৩ একর জায়গার উপর নতুন করে কারাগার নির্মাণ করা হয়। কারাগারটি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও বন্দি স্থানান্তর করা হয় ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে। কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দিদের ধারন ক্ষমতা ৫০৭ জনের। যার মধ্যে পুরুষ বন্দি ৪৪৭ জন এবং মহিলা বন্দি ৬০ জন। কারাগারটি বড় পরিসরে নির্মাণ হলেও মুসল্লীদের নামাজ পড়ার জন্য কোন মসজিদ নির্মিত হয়নি।

মসজিদ না থাকায় কারাগারের ব্যারাকের একটি রুমে নামাজ আদায় করতো কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যারাকের রুমটি ছোট ও ভিতরে হওয়ায় কারাগারে বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসা স্বজনদের নামজ পড়ার সমস্যা হতো। মুসল্লিদের নামাজ পড়ার সমস্যার কারনে বর্তমান জেল সুপার তুহিন কান্তি খান নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং মাত্র চার মাসে চমৎকার একটি দৃষ্টি নন্দন মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদ নির্মাণের জন্য ছিল না কোন সরকারি অনুদান। প্রথমে কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে এবং নিজেরা নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে থেকে শ্রমিকের কাজ করে মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। জেল সুপার নিজেও বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের সাথে থেকে মসজিদের ইটের গাতনির দেয়ালে পানি দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ নিজ হাতে করেছেন। জেল সুপার মসজিদ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী, কারাগারে আটক থাকা বন্দিদের স্বজন, মাদারীপুরের বড় ব্যবসায়ী ও শুশীল সমাজের লোকজন কাছে আর্থিকভাবে সহযোগিতা চাইলে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ মসজিদ নির্মাণের জন্য অনেকে নগদ টাকা, ইট, সিমেন্ট, বালু, ইটের সুরকি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও জেল সুপার তুহিন কান্তি খানের রাত-দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মসজিদটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের ফলে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

কারাগারে বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, কারাগারে আটক থাকা স্বজনদের সাথে দেখা করতে এসে দেখলাম কারাগারের প্রবেশের পূর্বেই সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। জানতে পারলাম হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও জেল সুপার দৃষ্টি নন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছেন। খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

মসজিদে নামাজ পড়তে আসা কয়েকজন স্থানীয় মানুষ জানান, কারাগারটি চার-পাঁচ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হলেও এখানে কোন মসজিদ ছিল না। তুহিন কান্তি খান জেল সুপার হয়ে যোগদানের পরেই কারাগারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসীকে নিয়ে অল্প সময়ে খুবই চমৎকার একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করলাম খুব ভালো লাগছে। জেল সুপারসহ কারাগারের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। মাদারীপুর জেলা কারাগারের জেলর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের কারাগারের নতুন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মসজিদটি নির্মাণে সহযোগিতা করায় কারা মহাপরিদর্শক, জেল সুপার, কারাগারের স্টাফ ও এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।

মাদারীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার তুহিন কান্তি খান বলেন, নতুন কারাগারটি নির্মাণ করা হলেও এখানে নামাজ আদায় করার জন্য কোন মসজিদ ছিল না। আমি এখানে যোগদানের পরে মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রথমে কারাগারের সকল স্টাফদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেই কি ভাবে এখানে দ্রæত একটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়। পরবর্তীতে কারা মহাপরিদর্শক স্যারকে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি জানালে স্যার আমাদের পরামর্শ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করেন। মসজিদ নির্মাণের জন্য কোন অর্থ ছিল না। আমরা শূণ্য থেকে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করি।

মসজিদটি নির্মাণের জন্য আমাদের কারাগারের প্রতিটি স্টাফ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলস শ্রম ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি অত্র এলাকার লোকজন অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে