বরিশালে পুলিশ বক্সে হামলা গাড়ি ভাঙচুর 

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ২২:৫০

বরিশাল অফিস
বরিশালে আন্দোলনকারীদের হামলায় ভাংচুরকৃত পুলিশ বক্স ও গাড়ি-যাযাদি 

বরিশালে কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। শনিবার (০৩ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে বৃষ্টির ভিতরে বরিশাল নগরীর চৌমাথা এলাকার মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় কমপক্ষে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কোন শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সংগঠক। তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দুস্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এর আগে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দিনভর প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা ১১টার দিকে বিএম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে সাড়ে ১১টায় নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। প্রথমে সেখানে পুলিশ নিরাপত্তার জন্য থাকলেও ঘন্টাখানিক পরে তারা প্রায় এক কিলোমিটার দুরে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা পুলিশ বক্সে অবস্থান নেয়। 

শিক্ষার্থীরাও টার্মিনালের সামনে দেড়টা পর্যন্ত অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মহাসড়কে আসেন। সেখানে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এসময় সারাদেশে আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনার বিচার এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। অন্যদিকে নগরীর আমতলা মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘন্টাখানিক আবস্থানের পর তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। 

তবে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করে যাবার সময় ঘটনাস্থলে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাংচুর করে। এতে পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। 

হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কনস্টেবল সিফাত গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হামলার সময় গাড়িতে থাকা এএসআই নেয়ামত খান। এ দুজন ছাড়াও গাড়িতে কনস্টেবল হাসনাত, রিয়াজসহ পুলিশের ৪ সদস্য ছিলেন। তারা সকলেই আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এএসআই নেয়ামত খান বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য খাবার নিয়ে আমরা বরিশাল নগরী থেকে বাবুগঞ্জের রহমতপুর বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে চৌমাথা এলাকায় পৌঁছালে দেখতে পাই আন্দোলকারীদের মিছিল। 

আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের গাড়িটি সড়কের পাশে চাপিয়ে দেন চালক। তবে কিছু আন্দোলনকারী আমাদের গাড়ি দেখে হইহুল্লোড় শুরু করলে গাড়িটি রেখেই চালক দৌড় দেন। তখন আমরা আটকা পড়ে গেলে কয়েকজন লোক কাছেই থাকা মারকাজ মসজিদের ভেতরে আমাদের আশ্রয় দেন। এ সময় হামলায় আমাদের এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। বাকিদের তেমন ইনজুরি হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্ররা বেলা আড়াইটার দিকে কর্মসূচি শেষ ঘোষণা করে যে যার মতো চলে যাচ্ছিলেন। আর ওই সময় পুলিশের গাড়িটি চৌমাথা এলাকায় এসে পৌঁছায়। অনেকে গাড়িটিকে ছাত্রদের মাঝে যেতে মানা করলেও তারা তা শোনেননি তারা। পরে গাড়িটি ছাত্রদের মধ্যে চলে এলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ভাঙচুর ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। বিক্ষুব্ধরা গাড়িটি ভাঙচুর করার পর সেটিকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে সড়কের ওপর ফেলে আড়াআড়ি করে রাখেন। পাশাপাশি পাশেই থাকা পুলিশ বক্সেও হামলা চালান তারা। এ সময় বিক্ষুব্দরা ভাঙা গাড়ির ওপর উঠে পুলিশের পোশাক নিয়ে উল্লাস করেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, একটি সু-শৃঙ্খল আন্দোলনে দুস্কৃতিকারীরা ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় কোন সাধারণ শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে দাবি তাদের। 

তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যাত্রী দুর্ভোগ হয়। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে দেখা যায়নি।

বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে কোন বাঁধা দেইনি। তারপরও শিক্ষার্থীরা অযথা পুলিশের উপর হামলা করেছে। পুলিশ বক্স ও গাড়ি ভাংচুর করেছে। 

ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, পুরো ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ধারণ করতে গেলে সেগুলো ডিলিট করে দেন আন্দোলনকারীরা। আর এসব কাজে যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে স্থানীয় লোকজনই বেশি ছিল, ছাত্রদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না।

যাযাদি/ এস