মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ফুলবাড়ীতে আন্দোলনে ভাংচুর-অগ্নি সংযোগ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ২০:২০
ছবি-যায়যায়দিন

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় একদফা দাবির আন্দোলন রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। এ আন্দোলনের কর্মসূচী পালনকালে আন্দোলনকারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে আন্দোলন বিরোধী জয় হাসানের রামদায়ের কোপে আহত হয়েছে আন্দোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আনারুল ইসলাম রানা (৩০)। তার বুকে আঘাত ও বাম হাতের মাংস ছিলে গেছে। তিনি ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের নাওডাঙ্গা পুলেরপাড় এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুজ্জামান মিয়ার ছেলে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালালে পাঠানো হয়েছে।

আরও আহত হয়েছেন আন্দোলনকারী, মহিউদ্দিন মুন্না (৩৮), মাসুদ রানা (৩৫), শিক্ষার্থী বাবুসহ (১৮) অন্তত ১০ জন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান।

তার মাথায় ৩ টি সেলাই হয়েছে। এছাড়াও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইট-পাটকেলের আঘাতে মাথা ফেটে গেছে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর সাংবাদিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের। তার মাথায় ৫ টি সেলাই হয়েছে।

জানা গেছে, সারা দেশের মতো শিক্ষার্থীদের একদফা আন্দোলনের সমর্থনে সকাল ১১ টার দিকে ফুলবাড়ী ব্রাক মোড় থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের একটি লাঠি মিছিল বের হয়।

মিছিলটি ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের জিরোপয়েন্ট এলকায় পৌঁছিলে ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আরেকটি লাঠি মিছিল জিরোপয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সামনে মুখোমুখী হয়।

এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকমীরা আন্দোলনকারীদের উপর হামলে পড়লে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। এতে আহত হয় কয়েকজন আন্দোলনকারী। পরে আন্দোলনকারীরা ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজ থেকে বের হওয়া অপর একটি আন্দোলনকারীদের মিছিলের সঙ্গে যোগ হয়ে তারা ফুলবাড়ী বাজারের দিকে আসে।

এ সময় আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের লক্ষ করে ইট-পাটকেল দিয়ে আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগ ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে পুরো ফুলবাড়ী বাজার আন্দোলনকারীদের দখলে আসে।

এ সময় ফুলবাড়ী ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুমসহ ফুলবাড়ী থানার একদল পুলিশ ফোর্স এসে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণ অবস্থায় নেয়ার আহবান জানালে আন্দোলনকারীরা তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি জিরোপয়েন্ট থেকে থানা রোডে প্রদর্শণ করে।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ফুলবাড়ী থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি জানালার গøাস ভেঙে ফেলে। থানার পাশে থাকা ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাব-এর সাইনবোর্ডসহ কিছু আসবাব ভাংচুর করে আন্দোলনকারীরা। পরে আন্দোলনকারীরাা তাদের সিনিয়র ভাইদের নির্দেশে ফুলবাড়ী থানার মুলফটক থেকে সরে আসে। এতে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আশঙ্কাময় বড়ধরণের একটি অপ্রীতিকর ঘটনার অবসান ঘটে।

এরপর বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা ফুলবাড়ী বাজারে প্রবেশ করে। তারা এ সময় ফুলবাড়ী বাজারের পোদ্দার মার্কেটে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাখা ৬ টি মোটরসাইকেল, ২ টি বাইসাইকেল ও একটি ভ্যান গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

জিরোপয়েন্ট এলাকায় ছাত্রলীগ দুই নেতার মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের বিরোধিতাকারী বৈশাখী হোটেল ভাংচুর করে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের কয়েকটি স্থাপনার ক্লাসও ভাংচুর করেছে আন্দোলনকারীরা।

অপরদিকে ফুলবাড়ী জয়বাংলা পাঠাগার, নাওডাঙ্গা পুলেরপাড়ের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, শাহবাজারের চাষী ক্লাব, উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও ফুলবাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের বাড়ি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগনেতা রাধে অন্তরায়ের গাড়ি রাখার স্থাপনা ভাংচুর করে আন্দোলনকারীরা।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার ওসি নওয়াবুর রহমান জানান, আমরা বড়ধরণেরর হতাহতের ঘটনা থেকে আন্দোলনকারীদের নিভৃত করতে পেরেছি। এ রিপোর্ট লেখার সময় রোববার রাত ৮ টা পর্যন্ত বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীদের হামলা-ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা থানায় এসেছেন। এ ঘটনায় মামলা হতে পারে বলেও জানান ওসি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে