মিরসরাইয়ে বন্যার পানির উন্নতি নেই, বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৫২

ইকবাল হোসেন জীবন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

টানা ছয়দিনের ভারী বর্ষণ ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ। নদীর পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ১১টি ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই এখানকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি কিছুতে কমছে না। 

বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পেলে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথমদিকে ফেনী নদীর তীরবর্তী করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম, ওসমানপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। রবিবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে এখানকার নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এছাড়া উপজেলার জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা ও মিঠানালা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের ১১ ইউনিয়ের বন্যাকবলিত এলাকায় কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নিরাপত্তা ও ঝুঁকির কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ বিভাগ এসব এলাকায় বিদ্যুৎসেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব গ্রাম এখনো বন্যার কবলে পড়েনি ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎসেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ মিরসরাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আদনান আহমেদ জানান, মিরসরাই জোনাল অফিসের আওতাধীন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এখানকার সাতটি সঞ্চালন লাইনের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওসমানপুর ইউনিয়ন ও বারইয়ারহাট পৌরসভার আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। যেখানে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন।’

এদিকে, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট আর আঞ্চলিক সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবী এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে থাকা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
মিরসরাইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মিরসরাই ও ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি এবং উদ্ধার কাজ করছি আমরা। ফেনী ও মিরসরাইয়ের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পানির তীব্রতা বেশি হওয়ায় কিছুতেই ত্রাণ সরবরাহ এবং উদ্ধার কাজ করা যাচ্ছে না। শনিবার কিছু কিছু এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করেছি, সেনাবাহিনী এবং পুলিশও কাজ করছে।’

উপজেলার উপকূলীয় ঝুলনপুল বেণীমাদব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ খাঁন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানে এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো টিউবওয়েল পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আশ্রিত মানুষের খাবারেরও সংকট রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, আমরা বন্যায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি। প্রশাসনের উদ্যোগে সমন্বয় টিম করে কাজ করা হচ্ছে। এসব টিমের মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতা ও খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

যাযাদি/ এসএম