বাবা মারা যাওয়ার পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া উর্মির বিয়ে সম্পন্ন করলো ইউথ ফর বাংলাদেশ

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০১

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর
ছবি যাযাদি

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন উর্মির পরিবার। বাবা মারা যাওয়ার পরে বড় সন্তান পরিবারের হাল ধরার একমাত্র চালিকা শক্তি কিন্তু মেয়ে হয়ে জম্ম নেয়ায় বিয়েও করতে হবে এবং বিয়ের কথা চলছে, মেয়েকেও ছেলে পক্ষ পছন্দ হয়েছে। এ সময় বাবার মৃত্যু ও হতাশাগ্রস্থ পরিবার নিয়ে নিজের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরিক্রমে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। ঠিক সেই মূহুর্তে শিক্ষিত সমাজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত সংগঠন ইউথ ফর বাংলাদেশ পাশে এসে দাঁড়িয়ে বিয়ের সকল কার্যক্রম সম্পাদনা করায় অসহায় পরিবারটির মুখে আনন্দের হাসি ফুটেজে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ও জাকজমকভাবে উর্মির বিয়ের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এলাকাবাসীসহ পরিবার আত্মীয় স্বজন সকলেই খুশি।

জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের চর হোগপাতিয়া গ্রামের উজ্জল হাওলাদার অটোরিকশা চালিয়ে দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মোটামুটি ভালোই সংসার চালাচ্ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বড় মেয়েকে আনন্দ মুখর পরিবেশে বিয়ে দিবে বাকি ছোট মেয়ে ও ছেলেকে লেখা পড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াবে কিন্তু বিধির ইচ্ছায় গত তিন মাস আগে অটো রিক্সা চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান উজ্জ্বল হাওলাদার। এরপরই পরিবারটিতে নেমে আসে আমাবস্যার অন্ধকার। হতাশাগ্রস্ত ও অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা, যেখানে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে মেয়ের বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আরও একটি দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এরমধ্যে একই উপজেলার কাসেমপুর এলাকার মোঃ ছায়েদুল সিপাহী ছেলে সাজ্জাদ সিপাহীর জন্য মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব পারিবারিক ভাবে আসে। মেয়েকে পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু উর্মির বাবা বেঁচে না থাকায় এবং আর্থিক সমস্যার কারনে পুরো পরিবারটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরে কিভাবে মেয়ের বিয়ে দিবে পরিবার? সে সময় “ইউথ ফর বাংলাদেশের” একজন সদস্য শিক্ষার্থী বিষয়টি ইউথ ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিতা চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানকে জানালে অতিদ্রুত পুরো পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ের সকল খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন। সকল সামাজিকতা রক্ষা করে সুন্দরভাবে উর্মির বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন।

বিয়ে বাড়ীর সাজসজ্জা, গেট সাজানো, গায়ে হলুদ, বরযাত্রীসহ প্রায় ২শতাধিক মানুষের বিয়ের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাবারের মধ্যে ছিল তিন রকমের মাছ, মুরগী রোস্ট, গরুর মাংস, বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন, দধি ও রসগোল্লা।  এরপর মেয়ের গহনা, মেয়ের নতুন সংসারের কিছু আসবাবপত্রসহ ক্রোকারিজ সামগ্রী। উর্মি বাবাকে হারিছে তবে বাবার দায়িত্ব পালনে একটু কমতি করেনি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইউথ ফর বাংলাদেশ।

কনে উর্মি আক্তার বলেন, আমার বাবা বেচে নেই। আজ আমার বিয়ের জন্য ইউথ ফর বাংলাদেশ যে আয়োজন করেছে এজন্য তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

কনের মা ময়না বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ইউথ ফর বাংলাদেশ খুব সুন্দর আয়োজন করেছে। মেহমানদের খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, পায়েস, দদি, মিস্টি, কোমল পানিসহ একটি সামাজিক বিয়ের জন্য যা যা দরকার সকল আয়োজন করেছে সংগঠনটি। মেয়েকে ঘর সাজানোর সকল ফার্নিচার দিয়েছে। এত সুন্দর করে আমার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার জন্য তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

ইউথ ফর বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের এক সদস্যের মাধ্যমে জানতে পারি যে, উর্মির বিয়ের কথা চলছে কিন্তু পরিবারের আর্থিক সমস্যার করনে বিয়ে সম্পন্ন করতে পারছে না। ইউথ ফর বাংলাদেশ মাধ্যমে উর্মির বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছি। বিয়ের সাজসজ্জা, খাওয়া, মেয়ের ফার্নিচারসহ সকল আয়োজন আমরা সংগঠন থেকে খরচ করেছি।

যাযাদি/এসএস