শেরপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল প্রকার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। একইসাথে পরবর্তীতে কার্যক্রম শুরু হলে তা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সকলকে অবহিত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে শহরের মুসলিম মার্কেটের এডভান্স আইটি ইনস্টিটিউট এর হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে ওই তথ্য জানান ছাত্ররা। ওইসময় ছাত্ররা বলেন, ছাত্রদের এখন পড়ার টেবিলে ফেরার সময় হয়েছে।
এ সময় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সঞ্জয় বণিক। আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শোক এবং আহতদের সহমর্মিতা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় বনিক বলেন, আজকের পর থেকে শেরপুরে আমাদের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
এরপর কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে কোনো কার্যক্রম চালু রাখলে তার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেরপুর জেলা টিম দায়ী থাকবে না। আমাদের সংগঠন একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক সংগঠন। আমরা এখানে সকলের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাই।
কিন্তু দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমাদের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর ভুল ধারণার কারণে আমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য ও গুজব ছড়াচ্ছেন। এসময় গুজব না ছড়িয়ে শেরপুর জেলার উন্নয়নে পাশে থাকার আহ্বান জানান। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেরপুর জেলা টিম কোন ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়।
আমরা অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রক্তের পূণমর্যাদা ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলোপ নিশ্চিত করতে আমরা শেরপুরের সকল ছাত্র জনতা অঙ্গীকারবদ্ধ।
এছাড়াও তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব সংঘটিত হয়, যার ফলে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশ দলমত নির্বিশেষে সকলে অংশগ্রহণ করেন যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত করে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে শেরপুর জেলা সংস্কারের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হই এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করি। এর মধ্যে রয়েছে, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মনিটরিং, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বাজার মনিটরিং, মন্দির পাহাড়া, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকান্ডে জড়িত ও আন্দোলনে চিহ্নিত খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে জোর দাবি জানিয়েছি।
বন্যায় সহযোগিতায় শেরপুর টিমের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারতের আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশের তিনটি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এসময় বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে মাত্র ৩ দিনের মধ্যে শেরপুরবাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টিমের নিকট ৭লাখ ২৯হাজার ১৬৭ টাকা এবং সাথে ব্যবহৃত কাপড় ও শুকনো খাবার সংগ্রহ করি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল তিনটি ধাপে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। ১ম ধাপের ত্রাণ বন্যাদুর্গতদের কাছে পৌঁছানো। ২য় ধাপে যদি শেরপুর বন্যা কবলিত হয় তাহলে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে ত্রাণ পৌঁছানো এবং ৩য় ধাপের ত্রাণ বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজে ব্যয় করা। ১ম ধাপে ত্রাণের পণ্যসামগ্রী বাবদ খরচ হয় ২লাখ ৪২হাজার ৪৭০ টাকা। যা নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট মোট তহবিল ৪লাখ ৮৬হাজার ৬৯৭ টাকা বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও পূনর্বাসন তহবিলে ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেয়া হবে। এছাড়াও সংগ্রহিত কাপড়গুলো পানি কমে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে শীতবস্ত্র হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেরপুর জেলা টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
যাযাদি/এসএস