কালুখালীতে পিতাকে হত্যার অভিযোগ স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে
প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৭

রাজবাড়ীর কালুখালীতে গত ৯ ডিসেম্বর দিবগাত রাতে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের নারায়নদিয়া তালতলা এলাকায় মাঠের ভিতর রসুন ক্ষেত থেকে কদম আলী শেখ (৫৫) নামের এক কৃষকের মরাদেহ উদ্ধার করে কালুখালী থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নিহতের বাড়ীতে গেলে তার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আহাজারিতে আকাশ বাতাশ ভাড়ি হয়ে যায়। তিনি একজন সহজ সরল ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো বলে এলাকাবাসী জানান।
নিহতের স্ত্রী মোছাঃ কাকলী বেগম জানান, আমার স্বামী একজন কর্মঠ ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। ঐদিন বিকেলে বাড়ী থেকে সবজি বিক্রি করতে হরিণবাড়ীয়া বাজারে যায়। অনেক রাত হয়ে গেলে ফিরে না আসায় আমরা খোঁজাখুজি করতে থাকি। এক পর্যায়ে রাত ১০ টার দিকে আমার স্বামীর লাশ মাঠের মধ্যে রসুন ক্ষেত থেকে পাওয়া যায়। এসময় বাজার থেকে ক্রয় করা তেল, সার তার ব্যবহৃত পায়ের স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারি আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত কদম আলীর ছোট মেয়ে পূর্ণিমা আক্তার বলেন, প্রায় ১০ মাস আগে সাভারিয়া পাড়া গ্রামের আবুল কালাম এর পুত্র মোঃ আলমগীর আমাকে আমাদের বাড়ীর পাশে ভুট্টা ক্ষেতে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা বসে আলমগীরের সাথে আমার বিবাহ দিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকেই আমার শ্বাশুরবাড়ীর লোকজন আমাকে নির্যাতন করতো। আমার শরীরে অনেক ক্ষত আছে। আমার শ্বাশুড়ি গরম তেল আমার পায়ের উপর ফেলে দিয়েছে। আমার স্বামী আমার বুকে ও বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আলমগীর বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার বাবা কদম আলীর নিকট থেকে ২লাখ ৫০ হাজার টাকা, জমি বন্ধকের ৮০ হাজার টাকা নেয় এবং আরও টাকার দাবী করে। এক পর্যায়ে আমি তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ী চলে আসি। পরে আমার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন আমার বাবার বাড়ীতে এসে আমার পরিবারের লোকজনের সাথে মারামারি করে। এ ঘটনার পরে রাজবাড়ী কোর্টে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা করি। মামলার পরে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মামলা না তুললে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। মামলার পর থেকে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। তারা আমার বাবাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিত। ঐদিন আমার স্বামী ও শ্বশুর সহ অন্যান্যরা আমার বাবাকে হত্যা করেছে বলে আমার ধারনা। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
কদম আলীর একমাত্র পুত্র আবজাল শেখ বলেন, আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের সাথে আমাদের বিরোধ চলে আসছিল। আমি ঢাকাতে থাকি। বাবা মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে আমি বাড়ীতে চলে আসি। ময়না তদন্তের জন্য থানা পুলিশ রাজবাড়ী মর্গে প্রেরণ করলে আমি বাবার লাশের সাথে যাই। বাবার মাথা, পা এবং অন্ডকোষে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন আমার বাবাকে হত্যা করেছে বলে আমার সন্দেহ। ঘটনাস্থলে গিয়ে ধস্তাধস্তির চিহ্ন দেখতে পাই। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে।
স্থানীয় আসাদুজ্জামান ভুট্টো বলেন, সোরগোল শুনে সাভারিয়া পাড়া বাজার থেকে আমি দৌড়ায় ঘটনাস্থলে আসার সময় আলমগীর ও জাহাঙ্গীর সহ ৩/৪ জন পালিয়ে যেতে দেখি। আমার ধারনা তারাই এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে।
এ ঘটনায় কালুখালী থানায় নিহতের স্ত্রী কাকলী বেগম বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
এ ব্যপারে কালুখালী থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যাযাদি/ এআর