সারিয়াকান্দির মিষ্টি আলু কন্টাক্ট ফার্মিংয়ে যাচ্ছে জাপানে!
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৬

একেতো অবহেলিত ফসল, অন্যদিকে বাজারে চাহিদা না থাকায় আগে বাড়ির উঠানে কিংবা সামান্য জায়গায় পরিবারের চাহিদা মেটাতে মিষ্টি আলু লাগানো হতো। কিন্তু এখন সময়ের সাথে সাথে অবহেলিত মিষ্টি আলুই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলাতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে।
বাঙালি নদীর চরাঞ্চলে 'জাপানি জাতের মিষ্টি আলু’ চাষাবাদ হচ্ছে গত তিন বছর হলো। দেশি মিষ্টি আলুর তুলনায় ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এ আলু চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
সরেজমিনে গত সোমবার (৩ জানুয়ারি) উপজেলার নারচী ইউনিয়নের গোদাগাড়ী ও চর গোদাগাড়ী গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মিষ্টি আলু সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে ফসলের মাঠ। কৃষকরা আলুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু মিষ্টি আলুর খেত শত শত বিঘা এ আবাদ করছে কৃষক। জাপানী জাতের সাথে কিছু স্হানীয় জাতের আলুর চাষ করেছে একদম অল্প জমি যাদের আছে। সবমিলিয়ে কৃষকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, সারিয়াকান্দি উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া মিষ্টি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় গত তিন বছর আগে।সারিয়াকান্দিতে উপজেলায় জাপানের নারুতো কোম্পানীর কন্টাক ফার্মিং এর মাধ্যমে বাঙ্গালী নদীর চরের জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ শুরু করেন মিষ্টি আলু। অন্য আলুর চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় ও প্রায় সব খরচ কোম্পানির পক্ষ থেকে পাওয়ায় এ আলু চাষে ঝুঁকছেন এ এলাকার চাষিরা। এতে তাদের আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরেছে।
জাপানের নারুতো কোম্পানির মাঠ কর্মী মো.শাহাদাৎ হোসেন সন্জয় যায়যায়দিনকে জানান, আমরা নারুতো জাপান কোম্পানি থেকে কৃষকদের চুক্তি ভিত্তিক জাপানি জাতের মিষ্টি আলু উৎপাদন করি এবং একটা নিদিষ্ট দামে চুক্তি অনুযায়ী ক্রয় করি।বর্তমান আমরা আমাদের জাতের আলু ৭০০ টাকা মন পাইকারি ভাবে ক্রয় করছি।
জাপানী নারুতো কোম্পানির কো-অর্ডিনেটর সাব্বির আহম্মেদ যায়যায়দিনকে বলেন, কৃষকদের বিনামূল্যে জাপানি জাতের মিষ্টি আলুর লাতা-পর্যাপ্ত পরিমান রাসায়নিক ও জৈব সার এবং প্রয়োজনীয় কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করি। সেই সাথে সর্বক্ষনিক আমরা ফিল্ড মনিটর করি
সব কিছু ফ্রী প্রদান করে কৃষকদের এ জাতের মিষ্টি আলু উৎপাদন করতে উৎসাহ প্রদান করি। যেহেতু বিদেশে এ এলাকার সুস্বাদু মিষ্টি আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তাই কৃষকের বিভিন্ন ভাবে চাষাবাদে সহযোগিতা করে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
২০২১ এর শেষ সময়ে শুরু করছি চরগোদাগাড়ী ও গোদাগাড়ীতে মাত্র চার জন কৃষক নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে। চলতি বছরে ৭০ থেকে ৭৫ জন কৃষক কৃষানী অনুমানিক ১৪০ বিঘা জমিতে এ আলু চাষ করেছে। আমাদের কোম্পানী হতে প্রদান কৃত কোন কিছুর মূল্য আমরা আলুর দামের সাথে কেটে নেই না।
সারিয়াকান্দি উপজেলার উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আবু সাঈদ যায়যায়দিনকে বলেন,আমরা আসলে কোম্পানির হয়ে কাজ করিনা। আমরা কাজ করি কৃষকদের লাভের জন্য জমিতে কোন রোগ বালাই হলে পরামর্শ দেয়। সেচ কখন দিতে কখন জমিতে নিড়ানী দিতে হবে এছাড়া যেকোনও সমস্যা হলে আমরা কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করি।
চরগোদাগাড়ী এলাকার মিষ্টি আলু চাষি মাফুজার যায়যায়দিনকে বলেন এবারের মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। প্রতি শতাংশে ২ মণ থেকে আড়াই মন মিষ্টি আলুর ফলন হবে। গতবার ১ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু পেয়েছি ৮০ মণ। প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি বিক্রি করছি ৭শ টাকা দরে। যেহেতু আলুর লাতা সার কিটনাশক সব জাপানী নারুতো কোম্পানি একদম ফ্রী দেয় এ তাতে আমার জমিতে পানি সেচ নিরানী বাদে কোন খরচ হয়না। ২ বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। বিক্রি করতে পারবো আশা করি ১ লাখ টাকার উপরে। খরচ বাদে তার লাভ হবে প্রায় ৯৪ হাজার টাকা, যা কিনা অন্য কোনো ফসল করে এত লাভ করা সম্ভব না।
গোদাগাড়ীর কৃষক মোঃ শাহজাহান যায়যায়দিন বলেন, আমি ৭০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আমার কোনো খরচ নেই বললেই চলে ৭ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। আর কোনও খরচ নাই। এবার মনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মত মিষ্টি আলু বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করি। যারা আলু কিনেছেন তারাই ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে যাবেন। তিনি আনন্দের সহিত আরও বলেন, মিষ্টি আলু বিক্রি নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ও পরিশ্রম করতে হয় না। জাপানী নারুতো কোম্পানী লোক এসে জমি থেকেই মিষ্টি আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যায়যায়দিনকে বলেন, এ বছর মিষ্টি আলু উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবছর ৪১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। উপজেলায় এবার মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৫ হেক্টর। শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে এখানে জাপানী কোকো -১৪ জাতের পাশাপাশি সামান্য কয়েক বিঘায় স্হানীয় উন্নত জাতের মিষ্টি আলু চাষ করা হয়েছে।নানা ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ থাকায় এই মিষ্টি আলু মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর এ বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও অনেক খুশি।
যাযাদি/ এসএম