চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার নব গঠিত তিন কমিটিকে প্রহসনের কমিটি হিসেবে অভিহিত করে কমিটি থেকে শতাধিক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে দাবি করে তিনটি কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তারা। একই সঙ্গে এই কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেলকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের একাংশ। সংবাদ সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন করতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে লালখান বাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটিতে সম্মুখযোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে নারী হেনস্তা ও কিশোর গ্যাংকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের নিয়ে একপক্ষীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। সনাতন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক জুবায়ের মানিক অভিযোগ করেন, এই তিনটি কমিটি প্রহসনের। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের মূল্যায়ন করা হয়নি, বরং চাঁদাবাজ, নারী হেনস্থাকারী ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদও এই কমিটির বিষয়ে কিছু জানেন না। অথচ খান তালাত রাফির ইন্ধনে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এই কমিটি গঠন করেছেন। আমরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির থেকে পদত্যাগ করা যুগ্ম-আহ্বায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, যারা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেনি এবং সম্মুখ সারিতে ছিলেন না তাদেরই কমিটির প্রধান পদে রাখা হয়েছে। অথচ যারা চট্টগ্রামে আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলেন তাদের মাইনাস করেই এ কমিটি দেওয়া হয়। আন্দোলনের সময় না থেকে যারা গত ৬ মাসে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তাদেরই স্থান দিয়েছে কেন্দ্র।
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল বাছির নাঈম তিন দফা দাবি তুলে ধরেন- ১. বিকেল ৩টার মধ্যে বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে তিনদিনের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিটি গঠন করতে হবে। ২. অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩. কমিটি গঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এই দাবিগুলো মানা না হলে সড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পদত্যাগকারী সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনের পর নগরের লালখান বাজার মোড় অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ সময় চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ মুখী লেইন ও আগ্রাবাদ থেকে জিইসি মুখী লেইনের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধই ছিল।
এরআগে গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিজাউর রহমানকে আহ্বায়ক ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৩১৫ সদস্যের মহানগর কমিটি দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবাইর হোসেনকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৩২৭ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াছির আরফিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. রইছ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে।
যাযাদি/ এমএস