গড়াই নদীতে কুমির, স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৪

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
ছবি: যায়যায়দিন

ঝিনাইদহের শৈলকুপার গড়াই নদীতে ছোট বড় ৪ টি কুমির ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে। কুমিরগুলো স্থানীয়দের নজরে আসার পর চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীপাড়ের বাসিন্দা ও জেলেরা সাবধানে চলাচল করছেন। 

বিশেষ করে নদীপাড়ের গ্রাম খুলুমবাড়িয়া, মাদলা শাহবাড়িয়া, গাংকুলা, চরপাড়া নলখোলাসহ এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দৈনন্দিন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করলেও এখন কুমির আতংকে নিজেদের গোসল, গরু-ছাগলের গোসল করাতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, একটি বড় কুমির, যার আকার ৭ থেকে ৮ হাত হবে। 

তার সাথে রয়েছে ৩ টি বাচ্চা কুমির। দির্ঘ প্রায় দুই মাস হলো কুমিরগুলো দেখা যাচ্ছে বলে তারা জানান। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন এটা বন পরিবেশের জন্য খুশির খবর। 

এদিকে কুমিরগুলো দেখতে প্রতিদিন নদী পাড়ে ভীড় করছে স্কুল শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষ। 

শৈলকুপার খুলুমবাড়িয়া খেয়া ঘাটের মাঝি চম্বক কুমার দাস বলেন, তিন মাস ধরে তারা নদীতে কুমির দেখে আসছেন। 

একটি বড় কুমির ও সাথে তিনটি ছোট কুমির। সর্বশেষ গত রোববার (২ মার্চ) দুপুরে গড়াই নদীর ওপার রাজবাড়ি জেলার কেওয়া গ্রাম এলাকা থেকে একটি ড্রোন উড়িয়ে বড় একটি কুমির ভাসতে দেখেছেন তারা। 

যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। মাঝি চম্বক কুমার দাস বলেন স্থানীয় প্রশাসন কুমিরগুলো উদ্ধার করতে না পারলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

গড়াই নদী পারের মৎসজীবী মাদলা গ্রামের ওলিয়ার মোল্যা বলেন, তারা কোন দিন কুমার নদীতে কুমিরের দেখা পাননি। তিন মাস ধরে তিনি আতঙ্কে মাছ শিকার করতে পারেন না।

রোববার নদীতে খেয়া নৌকা করে মাছ ধরতে গেলে কুমিরের আট থেকে ১০ হাত দুরে অবস্থান করেন। এ সময় বৈঠা দিয়ে তার পিঠের উপর আঘাত করেন সে। তিনি আরো জানান, কুমিরের আকার হবে ৮ থেকে ৯ হাত। পিঠের উপর সেওলা জমে আছে।

মাদলা এলাকার হুসাইন জানান, কিছুদিন আগে জালে একটি কুমির আটকে যায়। যদিও পরে তা জাল ছিড়ে চলে যায়।


খুলুমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল রানা  বলেন, প্রায় ২ মাসের বেশি সময় ধরে এখানে কুমিরগুলো দেখা যায়। রবিবারও দুই থেকে তিন বার নদীতে কুমির ভাসতে আমি দেখেছি। 

প্রতিদিন এলাকার শত শত মানুষ এ নদীতে গোসল, জামা-কাপড় ধোয়াসহ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ করতো। এখন কুমির আতঙ্কে কেউ নদীতে নামতে পারছে না। 

খুলুমবাড়ি গ্রামের আছালত মোল্যা বলেন, তিন মাস ধরে তারা নদীতে কুমির আতঙ্কে আছেন। দিনে চারবার কুমির ভেসে ওঠে। একটি অনেক বড় আর তিনটি ছোট আকারের খুব সম্ভব তার বাচ্চা। তার দাবী প্রশাসন কুমির চারটি উদ্ধার করে নদী পাড়ের মানুষদের আতঙ্ক দুর করবেন।

গড়াই নদীতে কুমির নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মৎস কর্মকর্তা ফরহাদুর রেজা বলেন, গড়াই নদীতে কুমিরের কোন ইতিহাস নেই। তিনি এখন পর্যন্ত শোনেননি গড়াই নদীতে কুমিরের কথা। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বন বিভাগের মাধ্যমে তা উদ্ধার করে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে অবমুক্ত করা হবে।

গড়াই নদীতে কুমির নিয়ে ঝিনাইদহ বন বিভাগের জোনাল কর্মকর্তা বলেন, তিনিও শুনছেন গড়াই নদীর কুমিরের কথা। যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে পরিবেশের জন্য খুশির খবর। নদীতে কুমির থাকবে, মাছ থাকবে, জীব বৈচিত্রের আরো অনেক কিছু থাকবে। এটা আগে ছিল। 

আমরা আশা করি নদী নালার আগের রুপ ফিরে আসুক। তার ধারনা হয়তো বর্ষ মৌসুমে কুমিরগুলো এসেছিল।

উপযুক্ত পরিবেশের পাওয়ায় আর ফিরে যায়নি। নদী পাড়ের মানুষের কাছে তার আবেদন তারা যেন কুমিরগুলোকে বিরক্ত না করে।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, গড়াই নদীতে কুমির ভাসছে বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে সরেজমিনে যাওয়া হয়নি। গভীর পানিতে না যাওয়া এবং নদী পাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থেকে নদীতে যাওয়ার পরামর্শ দেন ইউএনও। 

যাযাদি/ এস