কোটচাঁদপুরে শিশু কন্যাকে হত্যা করলো সৎ মা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ১১:০৪

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

সাড়ে ৫ বছর বয়সী মাহমুদা নামের এক শিশু কন্যাকে ঘাস পোড়া ঔষুধ খাওয়ায়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎ মায়ের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরা ডাঙ্গা গ্রামে। এ বিষয়ে শিশুটি’র পিতা শাহিন আলম বাদী হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হুমাইরা বেগম (২২)কে প্রধান আসামি করে শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযুক্ত হুমাইরা পলাতক রয়েছে।

সরেজমিনে এলাকাতে যেয়ে দেখা গেছে, ভোমরা ডাঙ্গা গ্রামে শাহিন আলমের বাড়ীতে প্রচুর মানুষের ভীড়। এ সময় শাহিন আলমের পিতা আবুল কালাম আজাদ জানান, আমার ছেলে শাহিন আলমের একমাত্র সন্তান শিশু কন্যা মাহমুদা ছিল এতিম। মাহমুদার জন্মের সময় তার মা মারা যায়। সেই থেকে মা মরা শিশুটি ছিলো আমাদের পরিবারের সবার চোখের মনি। ১ েবছর আগে শিশুটিকে মায়ের অভাব পূরণের জন্য শাহিন আলমকে বিয়ে দেন একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত মুনছুর আলীর কন্যা হুমাইরার সাথে। যদিও হুমাইরার এর আগে আরো দুটি সংসার ভেঙ্গে যায়। হুমাইরা ছিলো নিঃসন্তান। যে কারণে শিশুটিকে মায়ের অভাব পূরণের জন্য শাহিন আলম হুমাইরা কে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত ১বছর ভালই চলছিলো। ফুটফুটে শিশুটিকে মায়ের আদরে যতœ নিত সৎ মা হুমাইরা।

শাহিন আলমের পিতা আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, হঠাৎ করে কেন জানিনা আমার আদরের পুতনি  (ছেলের মেয়ে) মায়ের কাছে সরবত খেতে চেয়েছিলো। সেদিন ছিলো ১লা মার্চ শনিবার ওই দিন সন্ধ্যায় সৎ মা মেয়ে মাহমুদাকে আরসি’র সাথে জমির ঘাষ পুড়ানোর ঔষুধ মিশিয়ে খেতে দেয় তাকে। শিশুটি ওই আরসি কিছুটা খাওয়ার পরপরই ছটফট করতে থাকে। এ সময় সৎ মা হুমাইরা পরিবারের লোকজনের জানায় মেয়ে আরসি ভেবে ঘাস পোড়া ঔষুধ খেয়ে ফেলেছে। সাথে সাথে পরিবারের লোকজন শিশু মাহমুদাকে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই রাতেই শিশু মাহমুদাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন থাকার পর চিকিৎসার ব্যায় ভার বহন করতে না পেরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু মাহমুদাকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৬দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার (৬মার্চ) শিশুটির মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর আগে শিশু মাহমুদা বলে গেছে সৎ মা তাকে আরসি খেতে দিয়েছিলো । আর তাতেই তার এ অবস্থা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথা গুলি বলার সময় পরিবারের লোকজন ভিডিও ধারণ করে রেখেছে। শাহিন আলম জানান, হত্যার রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ঘটনার ৫দিনের মাথায় দ্বিতীয় স্ত্রী   হুমাইরা নিজের মুখে কীটনাষক লাগিয়ে বাড়িতেই নাটক সাজায়। এ সময় তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতলে ছিলেন। হুমাইরার বাপের বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে এসে হুমাইরাকে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে একদিন থাকার পর শিশু মাহমুদার মৃত্যুর খবর পেয়ে যায় সৎ মা হুমাইরাসহ তার বাপের বাড়ীর লোকজন। এর পরেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তারা। বর্তমানে শিশু হত্যাকারী সৎ মা হুমাইরার বাপের বাড়িতে তালা ঝুলছে।

কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, শিশু হত্যার অভিযোগ মামলা হয়েছে । মামলা নং- ৪, তাং-০৭/০৩/২০২৫। আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম আলামত কিছুটা উদ্ধার হয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুতই হত্যাকারীকে আটক করতে পারবো। 

যাযাদি/ এসএম