হরিরামপুরে আট মাস বেতন নেই, অর্থসংকটে ২৩ সিএইচসিপি

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৯

শুভংকর পোদ্দার, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

প্রান্তিক মানুষের দোড়গোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাজ করছেন ২৩ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। 

তৃণমূলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত এসব সিএইচসিপিদের বেতন-ভাতা ৮ মাস ধরে বন্ধ। অর্থসংকটে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব কর্মীরা। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পেলেও মানুষকে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসাসহ প্রায় ১৫ ধরনের সেবা ও ২৭ ধরনের ঔষুধ দেয়া হয়। শুক্রবার ব্যতিত সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মানুষকে সেবা দেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

গতবছরের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। গত আগস্টে চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলন করেন সারাদেশের সিএইচসিপিরা। পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।

সরজমিনে কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, ক্লিনিকে আসা মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা, ঔষুধ ও পরামর্শ দিচ্ছেন সিএইচসিপিরা। কুশিয়ারচর ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা গর্জন খাঁ বলেন, ব্যথায় বিছানায় পড়ে গেছিলাম। ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যের ওষুধ খেয়ে এখন সুস্থ্য হয়েছি। নিয়মিত ক্লিনিক থেকে ওষুধ নেই। যারা আমাদের সেবা দেন, তারা যদি বেতন ভাতা না পান, তারা যদি না থাকেন তাহলে আমাদের এই সেবা তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমরা কি করবো?

ঝিট্কা শিকদারপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি লিপি আক্তার বলেন, আট মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। জীবন অনেক কষ্টে যাচ্ছে। ক্লিনিকে প্রতিদিন যাতায়াতেও আমাদের খরচ হচ্ছে। অনেক ঋণ হয়ে গেছি। আশায় আছি, বেতন হবে। সামনে ঈদ আসছে। ঈদের আগে যদি আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া হতো তাহলে ঈদ ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।

কুশিয়ারচর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাথী খাতুন বলেন, তৃণমূলের মানুষকে আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। দুর্ভাগ্যবশত আট মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। রমজান মাস চলছে। সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন দ্রুতই আমাদের বেতন-ভাতা চালু করা হোক।

উজানপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আফরোজা সুলতানা বলেন, নিয়মিত অফিসে আসি। প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতে আমার ৪০ টাকা খরচ হয়। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও আমাদের খরচ কিন্তু বন্ধ নাই। বেতন ছাড়া চাকরি করা কষ্টকর। এভাবে একজন কর্মী চলতে পারে না। সরকারের কাছে আবেদন আমাদের বেতন যেন রাজস্ব খাত থেকে দ্রুত ছাড় করা হয়।

মানিকগঞ্জ জেলা সিচিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাকিল চৌধুরী বলেন, ৮ মাস ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। পরিবারের খরচ সামলাতে অনেকেই ঋণ হচ্ছেন। তারপরেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে আমরা পিছপা হচ্ছি না। নিয়মিত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ঈদের আগেই আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য  অন্তবর্তী সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী এ কে এম রাসেল বলেন, হরিরামপুরে ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যাতে ২৩ জন সিএইচসিপি কর্মরত আছেন। তারা মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে থাকেন। ৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গতবছরের ১৯ ডিসেম্বর তাদের ব্যাপারে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি।

যাযাদি/ এসএম