আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ময়মনসিংহে পরিবেশবাদী সংগঠনের ক্যাম্পেইন
প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ১৭:১৪

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং নীতি নির্ধারক হিসেবে নারীর ভূমিকা মূল্যায়নের দাবীতে এক ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) ময়মনসিংহের জয়নুল উদ্যানে এ প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যচিত্র ফাউন্ডেশন, ক্লিন (কোস্টাল লাইভ্লিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) ও বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল সারাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে নারীদের জ্বালানি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা।
প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি খাতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সকল স্তরে জ্বালানির ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যচিত্র ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানা বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৬ শতাংশই ব্যবহার হয় গৃহাস্থলির কাজে অর্থাৎ নারীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কিন্তু আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, নারীরা জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন উৎপাদন থেকে বিতরণ সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সারাদেশে নারীদের মালিকানায় মাত্র ২-৪ শতাংশ জমি থাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের এড়িয়ে যান এবং পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র সুবিধাভোগী হিসেবে তাদেরদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে দেখেন কিন্তু সক্রিয় অংশীদার বা নীতিনির্ধারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারী জান্নাতুল ফেরদৌস মীম তার বক্তব্যে বলেন, ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কারণে নারীরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন কারণ পুরুষদের মতো তারা সহজে স্থানান্তরিত হতে পারেন না। স্থানীয় এলাকায় বহিরাগতদের ভিড়ের কারণে তারা চলাচল ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন এবং মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসুবিধার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এসব সমস্যা সমাধানে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। সাধারণত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্যই নারীদের নামমাত্র পরামর্শ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ময়মনসিংহের সদস্য ইমন সরকার বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় নারীদের বিশেষ প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো, মাত্রাতিরিক্ত পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, সালফার ও ক্রোমিয়াম নির্গত করে। এই বিষাক্ত ধাতুগুলো নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। নারীরা এই দূষণের সরাসরি ও নিরীহ শিকার হলেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণের অধিকার নেই কারণ তাদের নামে জমির মালিকানা থাকে না।
প্রচারাভিযান কর্মীরা নারীদের জন্য সহজে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান। এ প্রচারাভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস, মাওয়া, কথা আক্তার, মিলি আক্তার, মিম, মোস্তাফিজুর প্রমুখ।
যাযাদি/ এম