হরিরামপুরে নানা অনিয়মে চলছে গভীর নলকূপ স্থাপন
প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে নানা অনিয়মে চলছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ। চুক্তি লঙ্ঘন করে পাইপ বসাতে গোবর ব্যবহার, খাবার ও বখশিসের নামে টাকা আদায়, নিম্নমানের পাইপ সরবরাহসহ গ্রাহকের কাছে থেকে আদায় করা হচ্ছে নানা উপকরণ। এতে বাড়তি অর্থ ব্যয়সহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বরাদ্দ পাওয়া মানুষদের।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারির কথা থাকলেও তাদের উদাসীনতায় অনিয়মের মধ্যে দিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাবমার্সিবলযুক্ত ৪৬৮টি গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। নলকূপের জন্য গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। প্রয়োজনীয় সব উপকরণ দিয়ে কাজ করবে ঠিকাদার। উপজেলায় শাহজালাল ট্রেডার্স ও সরকার অ্যান্ড সন্স নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক নলকূপের পাইপ স্থাপন শেষ হয়েছে। প্রতি নলকূপে সরকারি ব্যয় প্রায় ১ লাখ টাকা।
সরজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নলকূপ খননে বোরিং ফ্লুইড হিসেবে অবশ্যই বেন্টোনাইট ক্লে (এক ধরণের রাসায়নিক মিশ্রণ) মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে হবে। গোবর ব্যবহার করা যাবে না। করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং বিল প্রদান করা যাবে না এমন নির্দেশনা রয়েছে। এর জন্য আলাদা মূল্য ধরা থাকলেও অতিরিক্ত লাভ করতে গ্রাহকদের থেকে আদায় করা হচ্ছে গোবর। অনেকে স্থানীয়ভাবে জোগাড় করতে পারলেও বেশিরভাগ গ্রাহকেরই গোবর কিনে দিতে হচ্ছে। যাতে গুণতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া, খাবারের কথা বলে আদায় করা হচ্ছে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বখশিসের নামে নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। বুয়েটে মান পরীক্ষিত পাইপ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের পাইপ। ঠিকাদারের সিলেকশন বালু দেওয়ার কথা থাকলেও তা গ্রাহকদের থেকে আদায় করা হচ্ছে। এতেও বাড়তি লাগছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
গোপীনাথপুর পালপাড়া গ্রামের আক্তার প্রামানিক বলেন, তিন হাজার টাকা দিয়েছি মিস্ত্রিদের খাওয়া বাবদ। ৫০০ টাকা নিয়েছে বখশিস। গোবর দিয়েছি ১০০ ঝাকা। এর মধ্যে কিছু গোবর বেঁচে গিয়েছে।
নলকূপ পাওয়া রাহুল ইসলাম সাগরের মা বলেন, খাওয়া খরচ দিয়েছি ৩ হাজার। বখশিস ৫০০ টাকা। মোটর লাগানোর সময় ১৫০ টাকা দিয়েছি। আর গোবর দিতে হয়েছে ২২ বস্তা।
মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ২৫০০ টাকা দিয়েছি খাওয়ার। ৫০০ টাকা বখশিস। মোটর লাগানোর সময়ে নিয়েছে ৩০০। পদে পদে তাদের বখশিস দিতে হয়।
আন্ধারমানিক গ্রামের আব্দুল মালেকের স্ত্রী জানান, সকালে মিস্ত্রিরা বলেছে বাজার করুম, টাকা দেন। পরে তাদেরকে ১৫০০ টাকা দিছি। এছাড়া, তাদেরকে প্রায় ১৮-১৯ মণ গোবর এবং সিলেকশন বালু কিনে দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকার অ্যান্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট দেলোয়ার বলেন, বেন্টোনাইট ক্লে ব্যবহার করলে নিচে পানির লেয়ারে সমস্যা হয়। পানি কম আসে। গোবর দিয়ে করলে ভালো হয়। মিস্ত্রিদের খাওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই।
অপরদিকে শাহজালাল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামাল সরকার বলেন, অন্য একজনকে সাব-কন্ট্রাকে কাজ দিয়েছি। খাবার-বখশিস বাবদ টাকা নেওয়ার কথা না। বেন্টোনাইট ক্লে ব্যবহার করলে অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠে না। আমার লোক আপনার সাথে দেখা করবে।
এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অফিসে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হোসেন নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে বলেন। মুঠোফোনে মানিকগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ফাতিমা ফেরদৌস বলেন, গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার কোনো অপশন নেই। প্রয়োজনীয় সবকিছু বহন করবে ঠিকাদার। যদি এরকম হয় তাহলে বিষয়টা দুঃখজনক। এরকম হয়ে থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যাযাদি/ এসএম