কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়িতে পর্যটকদের ভিড়

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪৯

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
যায়যায়দিন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি পত্নী প্রমীলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় । ঈদের দিন অর্থাৎ সোমবার ও পরের দিন মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে । ভ্রমণ পিপাসুরা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জমিদার বাড়িতে এসে ভিড় করছেন ।

ঈদকে ঘিরে তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গনে যেন এক মেলায় পরিণত হয়েছে । বহু মানুষের সমাগম করছে জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে । উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে তেওতা জমিদার বাড়িতে পর্যটনের জন্য নতুন সংযোজন করেছেন। আপনি হতে পারবেন রাজা, রাণী ও সেনাপতি। এছাড়া কায়াকিং বোট ও প্যাডেল বোটে চড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচা ঘাট থেকে ৩০ টাকা অটো বা রিক্সা ভাড়া দিয়ে জমিদার বাড়ি আসা যায়। ১০  -১৫ মিনিট সময় লাগে জমিদার বাড়ি আসতে । জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখা সবার জন্য উন্মুক্ত। ঘুরে দেখার জন্য কোন টিকিট লাগেনা ।

জমিদার বাড়ি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে তেওতা জমিদার বাড়ির রাজ প্রাসাদ পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। জমিদার বাড়ির ভেতরে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে শত-শত মোটরসাইকেল অথবা অটো রিক্সা যুগে দর্শনার্থীরা আসছেন । অনেকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন সাথে নিয়ে জমিদার বাড়ির বিভিন্ন মহল ঘুরে-ঘুরে দেখছেন। জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে ফুচকা, চটপটি, হালিম, বাদাম, ঝাল মুড়ি ও বিভিন্ন খাবার দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে । উৎসুক পর্যটকরা আনন্দের সাথে এসব খাবার কিনে খাচ্ছেন। এতে তারাও যেমন খুশি বিক্রেতারাও অনেক লাভবান হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন কসমেটিকসের দোকান বসেছে । এ মেলায় হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, কাঠ, বেত, মাটি, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ বাড়ির যে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস এর দোকান বসেছে । এছাড়া, অনেকেই নাগরদোলায় সিরিয়াল দিয়ে উঠছেন । নানা বয়সী মানুষ নাগরদোলা ও নৌকায় উঠছেন । তাদের আনন্দে যেন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে তেওতা জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণ ।

জমিদার বাড়িতে ঘুরতে আসা ইমরান খান বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে জমিদার বাড়ি এলাকা ঘুরে দেখতে অনেক ভালই লাগছে । বন্ধুদের সাথে এখানে আসছি । এখানে এসে চটপটি খেয়েছি ও নাগরদোলায় উঠেছি ।

উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নের আজিজুল হক বিপ্লব বলেন, আমি অনেকদিন যাবত শুনতেছি জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে ঈদের সময় পর্যটকদের ভিড় জমে । আগে কখনো আমার আসা হয়নি। তবে এবার ঈদে এসে অনেক ভালই লাগছে।

জানা যায়, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা তেওতার তৎকালীন জমিদার ব্যারিষ্টার কীরণ শংকর রায় চৌধুরী ক্ষুরধার সাহিত্যকর্মের জন্য কবি নজরুলকে স্নেহ করতেন। তার আমন্ত্রণে কবি নজরুল ইসলাম ১৯২২ ও ২৬ সালে তেওতায় আসেন ।তেওতা জমিদারী এস্টেটের তৎকালীন নায়েব বসন্ত সেনগুপ্ত ও গীরিবালা সেনগুপ্তের একমাত্র কন্যা প্রমীলা ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তেওতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালে প্রমীলার পিতৃবিয়োগের পরে তার কাকা পুলিশ কর্মকর্তা ইন্দ্র সেনগুপ্তের চাকরীস্থল ত্রিপুরা যা বর্তমানে কুমিল্লা চলে যান। সেখানে ইন্দ্রের পুত্র নজরুল ভক্ত বীরেন্দ্রের মাধ্যেমে প্রমীলার সাথে পরিচয় ঘটে। ১৯২৫ সালে কলকাতায় নজরুল-প্রমীলা প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

শিবালয় উপজেলা অফিসার মো. জাকির হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে তেওতা জমিদার বাড়িতে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণের জন্য কায়াকিং বোট ও প্যাডেল বোটে চড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, সাজঘর এর ব্যবস্থা করা রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা চাইলে রাজা, রাণী ও সেনাপতি সাজতে পারবেন। এছাড়া, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রয়েছে । পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমাদের প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও সবসময় পর্যবেক্ষণ করছি । 

যাযাদি/ এমএস