অবৈধ বালু-মাটির ব্যবসায় হুমকিতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট, জনদুর্ভোগ

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:১৪

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউএ’র সরকারি জায়গা ও নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু-মাটি কাটার ধুম চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে পদ্মা নদীতে কাটার বসিয়ে বাল্কহেডে করে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরসোর জায়গা দখল করে এ বালু মাটির রমরমা ব্যবসা করছে স্থানীয় এক শ্রেণির বালু ব্যবসায়ী। 

দীর্ঘদিন যাবৎ এরা সিন্ডিকেট করে বালু মাটি কেটে রমরমা ব্যবসা করলেও সরকার এখান থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। এভাবে অবৈধভাবে বালু-মাটি কাটা অব্যহত থাকলে এবার বর্ষা মৌসুমে পাটুরিয়া ফেরিঘাট ও নৌবন্দরসহ আশপাশের এলাকায় নদী ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এতে, পাটুরিয়া ফেরি ঘাট ও নদী বন্দর হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এছাড়া, প্রতিনিয়ত চলাচলরত এসব ভারী বালুর ট্রাকের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় স্থানীয়দের চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে, ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে মাটির ট্রাকে থেকে বালু পড়ে মহাসড়ক নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে, মাঝেমাঝেই সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন। এছাড়া, ট্রাক থেকে বালু উড়ে বাড়িঘর ধূলাবালিতে ভরে যাচ্ছে। এতে, স্থানীয়দের খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এসব বালুতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন।

পাটুরিয়া ঘাটে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত অবৈধভাবে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। রাতের বেলায় দশ চাকার প্রায় অর্ধশত ড্রাম ট্রাকে করে বালু মাটি যাচ্ছে পাশ্ববর্তী ঘিওর উপজেলার পুখুরিয়ার স্কয়ার কোম্পানিসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে।

জানা গেছে, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসন আমলে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের যোগসাজসেই পাটুরিয়া ঘাটে চলতো অবৈধ এসব বালু-মাটির ব্যাবসা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওমীলীগ সরকারের পতন হলেও বন্ধ হয়নি শিবালয়ের অবৈধ বালু-মাটির ব্যবসা। শুধু হাত বদল হয়েছে মাত্র। 

ফলে, প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় সেই আগের বালুচক্রের সদস্যরাই শুধু হাত বদলের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটির ব্যবসা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বালু-মাটি ব্যাবসার সাথে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও শিবালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাত হলেই শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। এছাড়া, উপজেলার শিমুলিয়া ও উলাইল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়।
 
সরজমিনে পাটুরিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের আশপাশে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরসোর জায়গায় অনন্ত পাঁচটি স্থানে অবৈধ বালুর চাতাল রয়েছে। নদীর তীরে এসব জায়গা থেকে বালু মাটি কেটে নেওয়ার ধুম পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সরকারি জায়গা অবৈধভবে দখল করে (স্কেভেটর) ভেকু মেশিনের সাহায্যে সারারাত নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু-মাটি কেটে বিক্রি করছে।

এদিকে, আরিচা লঞ্চ ঘাট হতে হামজা ঘাট পর্যন্ত এলাকায় প্রতিস্থাপিত বিআইডব্লিউটিএ’র ৮ লাখ ঘনফুট ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল (বালু/মাটি) ইজারা দিয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক। যার ইজার মূল্য ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর সাথে আরো ১৫% ভ্যাট বাবদ ৬ লাখ ৪২ হাজার এবং ১০% আয়কর বাবদ ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে ইজারা নেন মের্সাস আলাল উদ্দিন ট্রেডার্স। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ১৯ মার্চ  উক্ত ইজারার সমস্ত টাকা পরিশোধ করা হয়। শিবালয় উপজেলা প্রশাসন সাইট বুঝিয়ে দিতে গরিমসি এবং ঠুনকো অজুহাতে মাঝে মধ্যেই বালু কাটা ও পরিবহনে বাঁধা প্রদান করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে লাখ-লাখ টাকা লোকসান যাওয়ার আশংকা করছেন উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

পাটুরিয়া ঘাটের ব্যবসায়ী মিন্টু কাজী জানান, নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু ও মাটি কাটা নিষেধ থাকলেও তা কেউ মানছে না। অবৈধ বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরসোর জায়গা দখল করে ৫টি অবৈধ বালুর চাতাল গড়ে উঠেছে। যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু মাটি কেটে এনে নদীর পারে ফেলে এখান থেকে ১০ চাকার ট্রাকে করে নিয়ে বিক্রি করছে যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এতে এবার বর্ষায় পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গনের আশংকা এবং হুমকির মুখে রয়েছে ফেরি ঘাট এলাকা।

স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী জসিম খান বলেন, আমরা কোন অবৈধ বালু-মাটির ব্যবসা করিনা। স্থানীয় হরিরামপুর থেকে বাল্পহেডে করে বালু কিনে এনে বিক্রি করি।

আরিচা ঘাটের বালুমহল ইজাদার মো. আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শিবালয় উপজেলা প্রশাসন পাটুরিয়া ঘাটের অবৈধভাবে বালু-মাটির ব্যাবসা বন্ধ না করে উল্টো তার আরিচা ঘাটে ইজারা নেয়া বৈধ বালু মহলের  বালু-মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছে। আরিচার বালু-মাটি ইজারা নেয়ার পর থেকেই উপজেলা প্রশাসন তাকে অসহযোগিতা করছে। এতে, তার মোটা অংকের টাকা লোকসান হবে বলে তিনি জানান।

আরিচা ও পাটুরিয়া নদী বন্দর কর্মকর্তা সেলিম শেখ বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে তাদের ফোরসোর জায়গায় অবৈধভাবে বালুর চাতাল করে বালু-মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। এসব অবৈধ বালুর চাতালের তালিকা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন জানান, পাটুরিয়া ঘাটে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা মাঝে-মধ্যেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আসছি। এছাড়া, জনস্বার্থে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আরিচা ঘাটে মেসার্স আলাল উদ্দিন ট্রেড্রার্স ইজারা দেয়া এলাকার বাইরে গিয়ে মাটি কাটায় বিআইডব্লিউটিএ’র লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে।

যাযাদি/ এমএস