নেসকোর ভৌতিক মামলায় হয়রানির শিকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৫ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৪

ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

নীলফামারীর ডোমারে নেসকোর ভৌতিক মামলায় হয়রানির শিকার সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরেও তাদেরকে জেল হাজতে যেতে হচ্ছে। 

আবার অনেকের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরেও মামলার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। নেসকো কর্তৃপক্ষ বলছে মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। 

বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত করতে নীলফামারী জেলাসহ রংপুর বিভাগে এরকম ৫হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডোমার উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য ডোমার ফিডারের আওতায় ৪হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহককে লাল নোটিশ প্রদান করা হয়। 

ওই নোটিশে বলা হয় নির্ধারিত তারিখে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ মামলার ঝামেলার কথা বলা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর অনেকে আংশিক আবার অনেকে সমূদয় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। 

অথচ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগেই হঠাৎ রাতে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ জানায় তাদের নামে বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। 

মামলার ব্যাপারে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য তারা কোন মামলা করেনি বা  মামলার বিষয়ে তিনি  কিছুই জানেন না। 

অফিসের দেয়া লাল নোটিশ অনুযায়ী বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ এবং ২০২২সালে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দোসর কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে মামলাগুলো করা হয়েছে। তখন ওই গ্রাহকদের কোন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল না। 
আবার অনেকের বিদ্যুৎ সংযোগেই নাই। 

অথচ তাদের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ মামলাগুলোর বিপরীতে এতদিনে কোন বিদ্যুৎ গ্রাহক আদালতের কোন নোটিশ পাননি কিংবা তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। 

ফ্যাসিষ্টের দোসর কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীর ইন্ধনে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের টার্গেট করে সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি, ঘুষ বাণিজ্য, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে বিতর্কিত করতেই হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নামে ওই ভৌতিক মামলা গুলোর গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। 

ফলে ঈদুল ফিতরের পূর্ব থেকেই চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। ডোমার থানা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দুই শতাধিক জনের নামে বিদ্যুৎ এর মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। 

চিলাহাটির বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বসুনিয়া জানান, ‘আমি পিডিবি'র কোন গ্রাহক নই। অথচ আমার নামে ২০১৫সালের একটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আমাকে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।’ 

পুর্ব চিকনমাটি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বেকারি ব্যবসায়ী সামসুল আলম জানান, তার বিদ্যুৎ বিলের টাকা বাকি রয়েছে। লাল নোটিশ পাওয়ার পর তিনি টাকা পরিশোধ করেন। অথচ রাতে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। তর নামে নাকি ওয়ারেন্ট রয়েছে। পরদিন অতিরিক্ত টাকা খরচ করে জামিন নিতে হয়। 

বড় রাউতা গ্রামের যাদব রায় জানান, তার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ ১০১৬ সালে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অথচ ওই মিটারের বিদ্যুৎ বিল দেয়া অব্যাহত রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় আবেদন করলেও কোন  কাজ হয়নি। 

নির্বাহী প্রকৌশলী তাকে প্রত্যয়ন পত্র দিচ্ছেন না। বর্তমানে গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অনেকের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরেও নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম প্রত্যয়ন না দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন জনৈক ব্যাক্তি।

ডোমার বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস আইয়ুব জানান, ইতিপূর্বে ফ্যাসিষ্টের দোসর কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীর সীমাহীন দুর্নীতি ঢাকতে তারা ভৌতিক মামলা করেন। 

যার খেসারত সাধারণ গ্রাহকদের উপর চাপিয়েছিল। বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করতেই ওই ফ্যাসিষ্টের দোসররা এখন এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। নেসকোর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু বিচার এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন।