ইউএনও ’র আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস

রায়পুরে ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৫, ১৭:৩৬

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রবহমান ডাকাতিয়া নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। পৌরসভার অংশের পশ্চিম পাশে প্রায় পাঁচশ মিটারে মাছ চাষ করছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪-১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীসহ তার সংযোগ খালের কয়েকটি অংশে বড় কয়েকটি বাঁধ অপসারণ করেছিলেন। তবে মাস না যেতেই সেখানে আবার বাঁধ দেয় তার। এছাড়াও হায়দরগন্জ সড়কে সোলাখালি ব্রীজ এলাকা, খাসেরহাট সড়কে বংশীব্রীজ এলাকা, হায়দরগন্জ বাজার এলাকা, হাজিমারা সুইস গেইট এলাকা, মোল্লারহাটবাজারে যাওয়ার পথে ব্রীজ এলাকাসহ কয়েক স্থানে দখল করে মাছ চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগ সরকার চলে যাওয়ার পর কয়েক মাস ধরে মোকসেদ উল্যা নামের স্থানীয় প্রভাবশালী লোক বিএনপি নেতাদের নামে নদীর ওই অংশ দখল করে মাছ চাষ করছেন। ২০০৯ সাল থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী সমন্বিতভাবে নদী দখলে নিয়ে মাছ চাষ করে। এতে আশপাশের এলাকার কৃষিকাজ ও মাছ চাষের ক্ষতি হয়। বাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়পুর- উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে পীর বাড়ী সংলগ্ন পৌরসভার অংশে নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। অবৈধ বাঁধের কারণে খালটিতে জোয়ার-ভাটায় স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি জায়গায় নেট দিয়েও আটকে দেওয়া রয়েছে।

 

শনিবার ৩ মে দুপুরে বাঁধের ছবি তোলার সময় মাছের ঘের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি মোকসেদ উল্যা এগিয়ে এসে বলেন, বাঁধ দিয়ে নদীকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। নদীর দুই পাশেই মাছ চাষ করা হয়।

 

দীর্ঘ বছর ধরে এভাবে চলছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের লোকজন মাছ চাষ করে। সাধারণ মানুষের বলার কিছু নেই।

 

খাল দখলের অভিযোগ সম্পর্কে মোকসেদ উল্যাহ বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে মাছ চাষ করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা ঘের করা শুরু করি। আমার সঙ্গে ২০-২৫ জন ছিলো। এ মৌসুমে আমি স্থানীয় আইনজীবী সহকারি ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন বিএনপি নেতার অনুমতি নিয়ে দুই লাখ টাকার গলদা, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছেড়েছি’। এসিল্যান্ডসহ স্থানীয় বয়াতি বাড়ীর বিএনপি কর্মী আবুল খায়েরসহ কয়েকজন আমাকে নদী দখল করে ঘের করতে নিষেধ করেছিলো।

 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার নেতৃত্বে নদীতে মাছ চাষ করা হয়েছিলো। এখনও ২০-২৫ জন আ' লীগের নেতা-কর্মী বিএনপির নেতাদের সাথে মাছ চাষ শুরু করেছেন। গত ৫ আগষ্টের পর তারা আত্নগোপনে চলে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন তা দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছেন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ ইজ জামান খান বলেন, গত বছর ডাকাতিয়া নদী ও তার সংযোগ যত খালের সকল বাঁধ খুলে দেয়া হয়। কেউ যেন তা দখল করে মাছ চাষ বা বাঁধ না দেয় সতর্ক করা হয়। খননের সময়ও পাউবোর তদারকি থাকে, তাঁরা দেখভাল করেন। স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে আবা অভিযান চালানো হবে।

 

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, সরকারি খাল ও নদী দখল করে মাছ চাষ বা অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। যদি কেউ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ডাকাতিয়া নদী ও খালের বাঁধগুলো কেটে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছাড়া কোন ব্যাক্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করতে পারবেনা বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। এখন এর ব্যাত্যয় ঘটলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।