দৌলতপুরে ভাঙছে পদ্মা, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২৫, ১৬:১০

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অ-সময়ে পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মরিচা ইউনিয়নের ভূরকা, হাটখোলা ও কোলদিয়াড় এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটারজুড়ে এই ভাঙন অব্যাহত আছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও এলাকাবাসী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙন রোধে হাটখোলা থেকে ভূরকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দুটি প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান। এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, পদ্মায় কিছুদিনের মধ্যে নতুন পানি এলে ভাঙনের আগ্রাসী রূপ আরও বেড়ে যাবে।

এক কিলোমিটার অংশের ভাঙন রোধের উদ্যোগে তাঁরা খুশি হলেও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বাকি তিন কিলোমিটারের ভাঙন নিয়ে। তাঁদের দাবি, পুরো এলাকাতে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ব্যবহারের পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে চলা ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি, বসতবাড়ি, কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড় থেকে মাত্র ১‘শ গজ দূরে থাকা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান জানান, একসময় তাঁদের বাড়ি থেকে আবাদি জমিতে যেতে হাঁটতে হতো প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এখন নদীর পাড়ে আসতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। চোখের সামনে পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে হারিয়েছেন চাষের জমি। দ্রুত ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা না নিলে তাদের বসতভিটাও হারাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সিরাজুল মন্ডল নামের এক বাসিন্দা জানান,আমাদের এলাকার চার কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এক কিলোমিটার অংশে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বাকি তিন কিলোমিটারে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এবারের বর্ষায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

নদী পাড়ের আরেক বাসিন্দা সুইট হোসেন জানান, ভাঙন সাময়িকভাবে রোধে সরকারের উদ্যোগে আমরা খুশি। তবে, যত দিন পর্যন্ত স্থায়ী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নেওয়া হচ্ছে, তত দিন আমরা উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যেই পড়ে আছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, আমরা এক কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। বাকি তিন কিলোমিটারের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়েও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।