জুলাই-আগস্টে হত্যা

মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীকে হয়রানির অভিযোগ

প্রকাশ | ১১ মে ২০২৫, ১৬:৩১

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশে মিথ্যা মামলার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। 
মামলাগুলোতে প্রায়ই নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে এবং নাম বাদ দেওয়ার জন্য অর্থ দাবি করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কারও নামে হয়রানিমূলক মামলা করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
এর আগে তার মন্ত্রণালয় থেকে এ রকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। 
পরিবার থেকে মামলা করার পারে অপরিচিত লোক মামলা করে আবার ফায়দা লুটছে।

জুলাই আন্দোলনে শহীদ ২১ বছর বয়সী সাব্বির মল্লিক ওরফে সাব্বির ইসলাম শাকিব। 
বাগেরহাটের চিতলমারী শেরে-বাংলা ডিগ্রি কলেজের মেধাবী এ ছাত্রের বাড়ি উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের মাঠপাড়া গ্রামে। তার বাবা শহিদুল মল্লিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। শহীদ সাব্বির মল্লিকের মা ও তিন বোন আছে। 

গত ১৯ জুলাই বাগেরহাট গ্রামের বাড়ি থেকে এসে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে বিকালে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হয়ে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৭ সেপ্টেম্বর '২৪-এ তার বাবা শহিদুল মল্লিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি জুলাই হত্যা মামলা করেন। 
আসামিদের তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। 

শহীদ সাব্বির মল্লিকের বাবা-মা বলেন,কিছু দিন পর জানতে পারেন মোহাম্মদপুর ঠিকানার অপরিচিত লোক তাদের না জানিয়ে শহীদ সাব্বির হত্যার একটি মামলা করেন। 
ওই ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এ মামলা করেন এবং এভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন।  তাদের একমাত্র ছেলে হারিয়েও ভোগান্তির শেষ হলো না। 

ওই ব্যক্তি তার নাম বলেন মো. মোশাররফ হোসেন (৩৯), তার বাবা মো. নেওয়াজ আলী এবং তাদের ঠিকানা ১৬৩/১ নয়া পল্টন। এই ঠিকানা ব্যাবহার করে এ সব মামলা করেন ওই প্রতারক।

শহীদ সাব্বিরের বাবা-মা'র দাবি মোশাররফ হোসেন নামের ওই প্রতারককে তারা চেনেন না। কখনো দেখেননি। 
তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ওই প্রতারক শহীদ সাব্বিরকে নিয়ে মামলা ব্যবসা করছে। 
অনেক নিরীহ ব্যবসায়ী, নিরপরাধী মানুষকে আসামি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর ৭১০/২৫ মামলা করেন। 
বর্তমানে এ সব মামলা উত্তরা পশ্চিম থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। এই প্রতারক চাঁদাবাজ মোশাররফ সেখানে শহীদ সাব্বিরের ভুয়া প্রতিবেশী সেজে ১৭৫ নাম তালিকা করে মামলা দেন। 

মামলার পরপরই কিছু আসামি ফোনে হুমকি পান, তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য অর্থ দাবি করা হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিরা শহীদ সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

শহীদ সাব্বিরের বাবা-মা ও বোন বলেন, ‌‌‌‘আমরা চাই না কেউ আর শহীদ সাব্বিরের নাম ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করুক। 
এরা প্রতারক আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও আমাদের হয়রানি থেকে মুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’ 

এ বিষয়ে মামলার বাদী প্রতারক মোশারফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘শহীদ সাব্বির মল্লিক আমার আত্মীয়। আমি কোর্টে মামলা করেছি, সেটি তদন্তাধীন আছে।’

শহীদ সাব্বিরের বাবা মামলার বাদিকে চেনেন না, ‘এই নামে তার কোন আত্মীয় নেই এমন কথা শোনার পর তিনি বলেন, আমি মোশারফ না আপনার সাথে আমি এখন দেখা করতে পারছি না।’  আবোল তাবোল বলে ফোনটি কেটে দেন। 

এ বিষয়ে গ্রামীণ মানবকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী বিএনপি দলের নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ সমস্ত ভুয়া মামলা সাজিয়ে টাকা আদায় করছে একটি প্রতারক চক্র। 
এই মামলায় আমাকেও  ১৭০ নং আসামি করা হয়। আমি এই বাদিকে চিনি না। আমার সঙ্গে কোনদিন দেখা হয়নি। 
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের কিছু প্রতারক ও দালালের কারসাজি। তারা এখানে বসে  সমস্ত অপকর্ম ও মামলা ব্যবসা করছেন। 
আমি প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

এদিকে এই মামলা তদন্তদিন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ পরিদর্শক এসআই ফরিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য পশ্চিম থানায় আমার কাছে এসেছে। 
আমি মামলার বাদিকে ফোন দিয়েছি। এই বিষয়ে যদি কোন মামলা আগে হয়ে থাকে তাহলে এই মামলাটি হতে পারে না। 
বাদী থানায় এলে তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা হলে সেই মামলা টিকবে না।’ 

এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক ফোরামের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুর রাজ্জাক রাজ বলেন, ‘যারা এ সমস্ত মামলা দিয়ে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।’


যাযাদি/এল