চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যাকান্ডের মূলহোতা সহ গ্রেফতার ২
প্রকাশ | ১১ মে ২০২৫, ১৭:০৮

ঢাকার আশুলিয়ার পাড়াগ্রাম এলাকার চাঞ্চল্যকর রুবেল মন্ডলকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের অন্যতম মূলহোতা আমজাদ মন্ডল এবং তার এক সহযোগী জুয়েল মাদবরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ৪।
মাছের ঘের দখলের দ্বন্দ্বের জের ধরেই মূলত এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তারা। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় লাশ দাফনের আগে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর সহ জড়িতদের শাস্তির দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী সহ ভুক্তভোগী পরিবার।
এর পরের দিনই র্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে র্যা-৪, সিপিসি-২ নবীনগর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর জালিস মাহামুদ খান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান। এরআগে, ঢাকার ধামরাই উপজেলাধীন কালামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আশুলিয়ার পাড়াগ্রাম এলাকার আশরাফ আলী মন্ডলের ছেলে আমজাদ মন্ডল (৪৫) এবং একই এলাকার সেরাজ উদ্দিন মাদবরের ছেলে জুয়েল মাদবর (৩৬)।
র্যাব জানায়, নিহত রুবেল মণ্ডল আশুলিয়ার পাড়াগ্রাম দক্ষিণপাড়া এলাকার নায়েব আলী মণ্ডলের ছেলে। তিনি তার বড় ভাইয়ের মাছের ঘের, ঝুট ও বালুর ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।
বেশকিছু দিন ধরে গ্রেফতারকৃত আমজাত মন্ডল গংদের সাথে মাছের ঘের নিয়ে বিবাদ চলে আসছিল। এর প্রেক্ষিতে গত ৭ মে সকালে রুবেল মন্ডলকে মাছের ঘের সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বিবাদের মীমাংসার কথা বলে বিবাদীরা আশুলিয়া থানাধীন পাড়াগ্রামের একটি অফিসে ডেকে নেয় এবং একই দিনে রুবেল মন্ডল এর নিজ মাছের ঘেরের পাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন লাশটি দেখতে পেয়ে আশুলিয়া থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর থেকে র্যাব-৪ এর আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যাকান্ডের জড়িত অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করেন।
পরবর্তীতে র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ধামরাই থানাধীন কালামপুর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের দু'জনকে গ্রেফতার করে।
খোঁজ নিয়ে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রুবেল মন্ডলের বড় ভাই রুহুল আমিন মন্ডল পরপর দুইবার আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন।
এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিল বেশ। তাঁর দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারণে এলাকায় অনেকগুলো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে। এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ওই সকল শিল্প কারখানার ঝুটের ব্যবসাসহ এলাকায় মাছের খামার ও গরুর খামার গড়ে তুলেন। তার এসকল ব্যবসার দখল নিতে ৫ই আগষ্টের পরে তার বিরুদ্ধে কয়েটি মামলা দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করা হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
রুহুল আমিন মন্ডলের অনুপস্থিতে ওই ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতে তার ছোট ভাই রুবেল মন্ডলকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। এতেই বিপত্তি দেখা দেয় । ব্যবসা দখলের পথে রুবেল মন্ডলকে বাঁধা মনে করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের পরিকল্পনা মতে রুবেল মন্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তার পরিবার।
রুবেল মন্ডলকে হত্যার পরিকল্পনা মোতাবেক গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে আলাউদ্দিন নামের একজন তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা শান্ত, গরুর ডা: জাকির, আমজাদ মন্ডল, জাইদুর মন্ডল, হামেদ মাদবর, কুদ্দুস মন্ডল, জুয়েল মাদবর, মুনসুর মন্ডল, মিজান মন্ডল ওরফে হায়েল মন্ডল, সেলিম মন্ডল, আবুল কাশেম দেওয়ান ও মিলন মন্ডল সহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জন তাকে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।
এদের মধ্য থেকে এরই মধ্য পুলিশ আলাউদ্দিনকে এবং র্যাব আমজাদ ও জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে। নিহত রুবেল মন্ডলের ভাই আলমগীর মন্ডল জানান, রুবেল মন্ডলকে হুমায়ূন চেয়ারম্যানের লোকজন আরো পনেরো/ষোল দিন আগে থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
এছাড়াও দু'দিন আগে জোরপূর্বক রুহুল মন্ডলের মাছের খামারের মাছ নিয়ে গিয়েছিল হুমায়ূন চেয়ারম্যানের লোকজন। ঘটনার দিন আলাউদ্দিনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকী আসামীরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়ণা তদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সর্বস্তরের মানুষজন তার লাশ এক নজর দেখার জন্য ভীড় করে। বাদ আছর জানাযা শেষে এলাকাবাসী হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
র্যাব-৪, সিপিসি-২ নবীনগর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর জালিস মাহামুদ খান জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন