সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ

হিলি কাস্টমস ও পানামা পোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ  

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৫, ১২:১৬

হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
সি এন্ড এফ এজেন্ট  অ্যাসোসিয়েশনের সাংবাদিক সম্মেলন । ছবি: যায়যায়দিন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থল বন্দরের কাস্টমস ও বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি  পোট  লিং লিঃ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।  রোববার  ১২ মে হিলি স্থলবন্দর কাস্টম সি এন্ড এফ এজেন্ট  অ্যাসোসিয়েশনের  উদ্যোগে নিজ কার্যালয় অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয় ।

সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপি উপজেলা শাখা সভাপতি ফেরদৌস রহমান তার বক্তব্যে বলেন, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের চরম  বৈষম্যের কারণে এ বন্দর পথে ভারতের সঙ্গে  আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য দারুনভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ফলে ব্যবসাযীরা যেমন একদিকে আর্থিকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন  অন্যদিকে  সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বর্তমানে প্রতিদিন ১৭/২০ টি করে ভারতীয় পণ্য বোঝায় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করছে অথচ পূর্বে প্রতিদিন সাড়ে ৩ শ' থেকে ৪০০ ট্রাক  প্রবেশ করতো। তাই এ বন্দরের  ব্যবসা বাণিজ্য যেন পূর্বের ন্যায় পরিচালিত হয়   সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস সহ  সংশ্লিষ্ট সকল  কর্তৃপক্ষের  সুদৃষ্টি কামনা করছি ।  

আমদানিকৃত কোন পণ্য দেশে প্রবেশের পর কাস্টমস  বিভাগ  অযাজিতভাবে এটিকে এইচ এস কোডে  ফেলে।

অথচ এই  কাজটির দায়িত্ব এল সি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। আর এর ফলে অনেক পণ্যের সঠিক এক্সামিন না হওয়ায় সেই পণ্যগুলোকে তারা জোরপূর্বক ভাবে কালো  

আইনের মধ্য দিয়ে ২০০% থেকে ৫০০% পর্যন্ত লোড (জরিমানা আদায়) দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমদানি কারকরা যে পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতেন সেখানে তার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে সেই পণ্য ছাড় করাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।

হিলি স্থল বন্দরে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে এবং এটা  অন্য পোর্টেও  চলছে । তাই দ্রুত এই কালো আইনটি বাতিলের জন্য এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি  কামনা করছি।

এছাড়াও এখানে কাস্টমস হাউজের  কমিশনার থাকার  দরকার তিনি না থাকায় আমদানিকারকগন বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে তাদেরকে রংপুর যেতে হয় ফলে সময় ক্ষেপনের  কারণে পানামার অনেক বেশি বিল পরিশোধ করতে হয়।

তিনি তার বক্তব্যে পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিঃ কর্তৃপক্ষের বিষয়ে  বলেন, আমদানি রপ্তানি পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে শ্রমিকের যে বিল পরিশোধ করতে হয় এ কাজটি পানামা পোর্ট  কর্তৃপক্ষ করে থাকেন।

আর আমরা যে পরিমাণ চার্জ আমরা তাদেরকে পরিশোধ করে থাকি শ্রমিকদের সেই পরিমাণ মজুরি দেয়া হয় না ফলে শ্রমিকরা যথাসময়ে পণ্য খালাস করে না।

এতে করে পানামা কর্তৃপক্ষের নাইটচার্জ  শুরু হয়ে যায় । আর  আমদানকারকদের   গুনতে হয় প্রতি রাতের জন্য ১২০০ টাকা  করে ফলে আমরা অনেক বৈষম্যের  স্বীকার হয়ে থাকি।

এছাড়াও পাথর, কয়লা, চায়নাক্লে, রাবার ক্লে ইত্যাদি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর পণ্যগুলি  নিজ ইয়াডে  নিয়ে গিয়ে তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালিত করেন কিন্তু একমাত্র হিলি স্থল বন্দরে আমরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।

এটি আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ। পাশাপাশি এ বন্দরও বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে। 

পণ্য খালাসে আমরা  প্রতি মে. টনে  ১৭০ টাকা করে মজুরি  প্রদান করে থাকি অথচ তারা শ্রমিকদের তার চেয়ে অনেক কম মজুরি  প্রদান করে থাকেন।

শ্রমিকদের প্রতি ভারতীয় ট্রাক  খালাসের ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা ও দেশি ট্রাক লোডের  ক্ষেত্রে ৭০০ টাকা করে দিতে হয়। আর এই টাকায়  পানামা পোর্ট  কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে প্রদান করে আসছেন।  

এছাড় পানামা পোর্ট  কর্তৃপক্ষ  শ্রমিকদের  মজুরির উপর  ভ্যাট বসিয়ে  থাকেন যা অন্য কোন  পোর্টে এ নিয়ম নেই। পোর্টে যে দুটি  স্কেল রয়েছে দুটিই ত্রুটিপূর্ণ ফলে এর খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

পোর্ট কর্তৃপক্ষ নিজে  এই পোটে  কোন ব্যবসা করতে পারবে না এমন বিধান থাকলেও  নেপাল বাবু বিভিন্ন নামে দীর্ঘদিন যাবত পাথরের ব্যবসা চালিয়ে  পোর্টের অধিক  সুবিধা  নিয়ে থাকেন  ফলে অন্যান্য পাথর ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় মার খেয়ে আমদানিতে  নিরুৎসাহিত্য হচ্ছেন।

পণ্য  রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না  থাকায় পণ্য  রপ্তানি সম্ভব হয় না। পোার্ট কর্তৃপক্ষের ছত্রছায়া ছাড়া কেউ ব্যবসা করতে পারে না।

অপরদিকে সংগঠনিটর সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা সহকারী অধ্যাপক শাহিনুর ইসলাম জানান,পানামা র্পোট লিংক লিঃ গত ২০০৭ সালে  অপারেশন কার্যক্রম  শুরু করে ।

চুক্তি অনুযায়ী এর ৩ বছরের মধ্যে যত অবকাঠামো লাগবে যেমন, লোডিং আনলোডিং পয়েন্ট বিল্ডিং গোডাউন ওপেন সেট ওপেন ইয়ার  গত ১৮ বছরেও শর্তগুলি পূরণ না করে উল্টো নেপাল বাবু  পোর্টে ভেকু ঢুকিয়েছেন।

ফলে  পাথরসহ  যেসব পণ্য লোডের ক্ষেত্রে ভেকু ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে ভেকুর ভাড়া পরিশোধ করার পরও  আবার লেবারের মজুরি আদায় করা হয়ে থাকে যদিও এক্ষেত্রে লেবার কোন কাজ করেন না।

অর্থাৎ কোন পণ্যের লোড ডাউনলোডের ক্ষেত্রে  দু'বার লেবার বিল  প্রদানের  নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে  আদায় করা  হচ্ছে ৪ বার।

এছাড়া ওয়্যার হাউস শট  থাকার কারণে যে সমস্ত দামি পণ্য যেমন, এলাচ ১ ট্রাকের মূল্য প্রায় ৩  থেকে সারে ৩ কোটি  টাকা ।  ১ ট্রাক জিরার দাম  প্রায় পৌনে ২ থেকে ২ কোটি টাকা। সেডে  জায়গা না থাকার কারণে এসব পণ্য ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত ভারতীয় ট্রাকে খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় রাখতে  হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের  মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান চৌধুরী, বন্দর বিষয়ক সম্পাদক এম এন মিঠু প্রমুখ।