সরকারি চাকুরীজীবী যখন সাংবাদিক!

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৫, ১৮:১৩

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা
ছবি: যায়যায়দিন

সরকারি চাকুরীবিধি ভঙ্গ করে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকক্টনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম জুয়েল নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আর আতাইকুলা ইউনিয়নের কুমিরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সরকারি কার্যদিবসের অফিস চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে পাবনা জেলা সদরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এলজিইডি, গণপূর্ত, সামাজিক বন, শিক্ষা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, খাদ্য দপ্তর, জেলখানা, সদর উপজেলা পরিষদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা সদর হাসপাতাল, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, পাবনা মেডিকেল কলেজসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তাকে দেখা যায়। একই সাথে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। 

একাধিক গণমাধ্যম কর্মি জানান, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যিনি খোদ সরকারি চাকরি করেন। তিনি কি করে অফিস চলাকালীন সময়ে পাবনা জেলা সদরে বিচরণ করেন। তিনি কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় বাংলা পত্রিকা ও ইংরেজি পত্রিকায় সাংবাদিকতা ও বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেন। একই সাথে তিনি কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা ও একটি টেলিভিশন চ্যানেলেও সাংবাদিকতা করেন। বিষয়টি কৌতুহলের ব্যাপার বলেই অভিমত দেন গণমাধ্যমকর্মিরা। তারা বলেন, তিনি পাবনা শহরের স্বনামধন্য একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেন। প্রতি মাসে তাকে সম্মানী দেয়া হয়। 

একাধিক অফিসের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, তার মামা পাবনার বড় সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা। এমন প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমাদেরকে বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে থাকেন। বিজ্ঞাপনের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বিজ্ঞাপন নিয়ে তবেই অফিস ত্যাগ করেন। 

স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৌশল অবলম্বন করে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই পাবনা অফিসে কাজের কথা বলে বের হয়ে আসেন। অনেক সময় না গিয়ে পরের দিন স্বাক্ষর করেন। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় স্কুলের কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পান না। 

তথ্যমতে, ২০১৮ সালে সাঁথিয়া উপজেলার সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি নিয়ে ২৫/০৮/২০১৯ তারিখে একই উপজেলার কুমিরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চলতি দায়িত্ব হিসেবে যোগদান করেন।   

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জুয়েলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ প্রকাশে থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। সরকারি চাকরি করে সাংবাদিকতা করা যায় কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। 

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি শুনেছি তিনি লেখালেখি করেন। তবে এতো বৃহৎ ভাবে সম্পৃক্ত সেটা জানতাম না। সরকারি চাকুরিবিধি অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা সরকারি চাকুরির বাইরে আর কিছু করার এখতিয়ার রাখেন না। তিনি যদি এটি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।