অনলাইন জুয়া: ধ্বংসের মুখে ফুলবাড়ীর যুবসমাজ

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৫, ২০:১০

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
ছবি: প্রতিকী

দিনাজপুরে রমরমা জুয়ার আসর এখন অনলাইন মাধ্যমে, অনলাইন জুয়ায় আশক্ত হয়ে পড়েছে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীরাই বেশি, অধিক লাভের আশায় অনলাইনে জুয়ায় সব হরিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেকে, এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘর ঘর নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।হাতে হাতে স্মাট ফোন আর ঘরে বসে জুয়া খেলার কারনে কিছুই করতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন।

প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বলছেন এতোদিন হোটেল বার, ক্লাব এগুলোতে জুয়ার আসর বসতো, সেখানে আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করা যেত, কিন্তু এখন হাতে হাতে স্মাট ফোন আর ঘরে বসে জুয়ায় অংশ নেয়ায় কিছুই করার থাকছেনা প্রশাসনের।

অনলাইনে ক্যাসিনো সুধু ফুলবাড়ী উপজেলা বা দিনাজপুর জেলায় সীমাব্ধ নয়, এই অনলাইনে জুয়ার প্রভাব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে অনলাইনে ক্যাসিনো সুধু শহরে সীমাব্ধ নাই, অজো পাড়া গাঁয়েও অনলাইনে জুয়া চলছে। গোলাম কিবরিয়া নামে এক ইউনিয় পরিষদ কর্মকর্তা জানান, এক সময় যেখানে বিদ্যুতের বাতি জ¦লেনি, অনলাইন কি সেটাও জানতোনা। এখন সেখানেও অনলাইন ক্যাসিনোতে আশক্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। তিনি বলেন খোলার মাঠে নির্জন স্থানে একা একা বসে তারা অনলাইন ক্যাসিনো খেলছে, এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তারা। তিনি বলেন অনলাইনে ক্যাসিনো খেলে অনেকে জমি বাড়ী এমন কি ভিটেমাটিও হারিয়েছে, অনেকে বাড়ী বিক্রি করে এখন ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছে, অনেকে ঋনের দায়ে এলাকা ছাড়া হয়েছে। অনেকের নামে টাকা ধার নিয়ে না দেয়ার অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে একাধিক বিচারের আবেদন আসচ্ছে।

এই অনলাইন ক্যাসিনোতে সুধু যুবরায় নয়, শিক্ষার্থী, বেকার যুবকসহ অনেক স্কুল কলেজের শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছে।
ফুলবাড়ী মাদিলা হাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্য (সহকারী অধ্যাপক আইসিটি) সাংবাদিক আবু শহীদ বলেন, অনলাইন ক্যাসিনো হলো ডিজিটাল মাধ্যম, যেখানে মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন ক্যাসিনো গেম খেলতে পাওে, এছাড়া অন্য অনলাইনেও ক্যাসিনো সাইট রয়েছে যা মুলত বাজির মাধ্যমে টাকা জেতার সুযোগ করে দেয়, আর হারলে পুরোটা কেটে নেয়। এই টাকা জেতার আশায় যুব সমাজ থেকে শুরু করে এখন সব বয়সের মানুষেরা স্মাট ফোনের মাধ্যমে অনলাইন ক্যাসিনোতে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন এ অনলাইন ক্যাসিনোতে এখন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়েছে।

প্রগতিশীল রাজনীতিবীদ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম বলেন এ অঞ্চলে কলকারখানা ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে না উঠায় এখানে বেকার যুবকের সংখ্যা বেশি, এ কারনে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে, এছাড়া অনলাইনে জুয়া যেহেতু কোন বাধা আসেনা এ কারনে তারা এখানে জড়িয়ে পড়ছে বেশি। তিনি বলেন ক্যাসিনোতে সর্বসান্ত হয়ে তারা চুরি ছিন্তাইসহ বেইনী কাজে জড়িয়ে পড়ছে, এর হাত থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে অনলাইন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে সারা দেশের তুলুনায় রংপুর বিভাগে অনলাইন ক্যাসিনোতে বেশি মানুষ জড়িত, এর মধ্যে দিনাজপুর জেলা ও জেলার দক্ষিনাঞ্চল ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর অন্যতম।

কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার সত্বে বলেন পার্বতীপুর উপজেলাতে অনলাইন ক্যাসিনোর এ্যাজেন্ট রয়েছে, এর কারনে এ অঞ্চলে অনলাইন ক্যাসিনোর প্রভাব এতো বেশি রয়েছে। সেই ক্যাসিনোর এ্যাজেন্ট একটি প্রভাবশারী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে ধরাছোয়ার বাহিরে থাকছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসাহাক আলী বলেন এক সময় হোটেল বার ক্লাবে জুয়ার আসর বসতো, সেখানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে সেই জুয়ার আসর ভেঙ্গে দিয়ে জুয়া খেলোয়ড়দের সাস্তির আওতায় আনা যেত, কিন্তু এখন গভির রাতে ঘরে বসে অনলাইনে ক্যাসিনো খেলছে, সেখানে অভিযান পরিচালনার সুযোগ নাই , এজন্য তিনি পরিবার গুলোকে সচেতন করার পাশিপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।
এদিকে অনলাইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকার ইচ্ছ করলে বিটিআরসির মাধ্যমে অনলাইনে ক্যাসিনো সাইড বন্ধ করতে পারবে, এখনেই তারা বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।