আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, ভোগান্তি চরমে

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৫, ১৩:১০ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৫, ১৩:১৯

যাযাদি ডেস্ক
আন্দোলনের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়-যাযাদি

রাজধানী ঢাকা আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে, এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। 

ঢাকার সিদ্দিকবাজারে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন মামুন খান। 

ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই মোটরসাইকেল রেখে মেট্রোরেলে রওনা দেন অফিসের উদ্দেশে। সচিবালয় স্টেশনে নামার পর রিকশা নেন। 

সেখান থেকেই বিপত্তির শুরু। সামনে সড়ক বন্ধ। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সামনে আন্দোলন-অবরোধে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর কূলকিনারা না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি।

তিনি জানান, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। এই শহরে থাকা আর ভোগান্তি যেন নামান্তর। সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভুগতে হয় সড়কে। 

আজ সপ্তাহের শেষ দিন। এমনিতেই বৃহস্পতিবার মানে ঢাকা শহরে যানবাহনের বাড়তি চাপ-যানজট ভোগান্তি থাকে। 

তার মধ্যে ঢাকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে। কাকরাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান। 

অন্যদিকে ইশরাককে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো গুলিস্তানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কার্যালয়ের সামনের সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন চলছে।

কাকরাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ বুধবার (১৪ মে) থেকেই। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সামনে বুধবার বিকেলে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও আজ আবার অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। 

যে কারণে সকাল আটটা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে যানজট।

সকাল ৯টা থেকে সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী আগারগাঁও, মহাখালী, উড়োজাহাজ ক্রসিং, বিজয় সরণি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মালিবাগ, কাকরাইল মোড়, গুলিস্তান, মতিঝিলজুড়ে কোথাও তীব্র যানজট কোথাও গাড়ির চাপ রয়েছে। 

অনেক স্থানের যাত্রীদেরকে বাস থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

সড়কে বাসে ভোগান্তিতে পড়া আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বিজয় সরণি মোড়ে নেমে হেঁটে রাস্তা পার হন। 

এরপর সিএনজিতে ওঠেন। তিনি বলেন, চারদিকে খারাপ অবস্থা। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাবো। তাই বাস ছেড়ে সিএনজিতে উঠতে বাধ্য হলাম। 

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে মগবাজার থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বিপাকে পড়েন বাসযাত্রী গণমাধ্যমকর্মী আলী তালুকদার।

তিনি জানান, বাস চলছেই না। কাকরাইল সড়ক বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটে সেগুনবাগিচায় আসি। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাব মোড় থেকে রিকশা নিয়ে রওনা দিই গন্তব্যে। 

সিদ্দিকবাজার মোড়ে আসতেই দেখি গুলিস্তান সড়কও বন্ধ। বাধ্য হয়ে রিকশা ছেড়ে আরো হাঁটা পথ ধরতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার মানেই বাড়তি চাপ। 

এদিন এমনিতেই সড়কে তীব্র চাপ তৈরি হয়। তার মধ্যে আজকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থানে সড়কে যানচলাচল বন্ধ। 

যে কারণে সড়কে সকাল থেকেই চাপ। সে চাপ অধিকাংশ স্থানে যানজট তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, অফিসগামী যাত্রী, পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইভারশন করা হয়েছে। 

গুলিস্তান-মতিঝিল গন্তব্য হলে নীলক্ষেত নিউমার্কেট সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলামোটর-হেয়ার রোড দিয়ে ডাইভারশন করা হয়েছে। 

কাকরাইলের সড়ক ক্লিয়ার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শুনছেন না। 

বরং আন্দোলনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। যানজট ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসীকে বিকল্প সড়ক ও ডাইভারশন মেনে চলাচল অনুরোধ করা হচ্ছে। 

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, তিন দফা দাবিতে কাকরাইলে অবস্থান নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গুলিস্তানেও সড়ক বন্ধ। 

এর চাপ পড়েছে তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়কে। সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনের সামনে থাকা জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত জানান, গুলিস্তান মাজারের সামনে থেকে দক্ষিণ সিটির সামনে হয়ে বঙ্গবাজারের দিকের রাস্তার দুই পাশ বন্ধ। 

ইশরাককে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন দক্ষিণ সিটির মূল ফটকের সামনে।