ফারাক্কার কারণে সেচহীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬ কোটি মানুষ
প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৫, ১৩:৩২

ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাবে সৃষ্ট পানির সংকটে বাংলাদেশে প্রায় ৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেছে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ উদযাপন কমিটি।
এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলে দুই কোটির বেশি এবং মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে চার কোটির মতো মানুষ সেচের অভাবে কৃষি ও জীবিকায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস (১৬ মে) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নদী গবেষক ও আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পে পানি সংকটে ৬৫ শতাংশ এলাকায় সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিকাংশ গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে, লবণাক্ততা বেড়ে কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে।”
মাহবুব সিদ্দিকী আরও জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বহু স্থানে নলকূপ অকেজো এবং পানিতে আর্সেনিক বেড়ে যাওয়ায় পানি পানযোগ্য নেই।
সুন্দরবন অঞ্চলেও মিঠাপানির অভাবে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহী অংশের গঙ্গায় আয়তন কমেছে ৫০ শতাংশ।
পানির গভীরতা কমেছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণের সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ কমেছে ৯০ শতাংশ।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে গঙ্গায় পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৯০,৭৩০ কিউসেক।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৭৫,৪০৯ কিউসেক। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গঙ্গায় পানি প্রবাহ কমেছে ১৫,৩২১ কিউসেক।
যদিও সে বছর গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল পূর্ববর্তী বছর গুলোর তুলনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কম।
মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘গঙ্গা এখন মৃতপ্রায় নদীতে রূপ নিয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে গঙ্গার আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে, অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে।’
সাংবাদ সম্মেলনে নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী সমস্যা সমাধানের সুপারিশগুলো উত্থাপন করেন।
এগুলো হল- ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করে নতুন গ্যারান্টি ক্লজসহ চুক্তি নবায়ন, যৌথ নদী কমিশনে নেপালের অন্তর্ভুক্তি, অভিন্ন নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করে ভারতকে অবহিত করা, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে ভারতের একতরফা কার্যক্রমের বিরোধিতা ও আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি, জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে আঞ্চলিক পানি কমিশন গঠন, ফারাক্কা-তিস্তা-বরাকসহ সব অভিন্ন নদীতে পানির ক্ষতি নিরূপণ করে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ফারাক্কা লং মার্চের অংশগ্রহণকারী মাহমুদ জামাল কাদেরীসহ অন্যরা।