সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পানিতে হাওরে জলাবদ্ধতা, ফসল রক্ষায় ইউএনও’র পদক্ষেপ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৫, ২১:৪০

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সিল্লার হাওরে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে হুমকিতে পড়েছে মরিচ, বাদাম, ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজির বিস্তৃত ফসলের মাঠ। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সরেজমিনে সিল্লার হাওর পরিদর্শনে যান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা। পরিদর্শনকালে ইউএনও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলেন এবং জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা উপলব্ধি করেন।

কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাওরে আকস্মিক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রতি বছর এই সময়ে একই সমস্যার সম্মুখীন হন তারা। জলাবদ্ধতার কারণে তাদের মরিচ, বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজির জমি ইতিমধ্যেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। কৃষকরা আরও জানান, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

কৃষকদের এমন উদ্বেগের কথা শুনে ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা তাৎক্ষণিকভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেন। তিনি দ্রুত অক্ষয়নগর গ্রামের পার্শ্ববর্তী ব্রিজের নিচে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে হাওর থেকে আটকে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি পথ তৈরি করে দেন। তাৎক্ষণিক এই পদক্ষেপের ফলে দ্রুত হাওরের পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। সেই সাথে পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রাকিবুল আলম বলেন, বৃষ্টির পানি আটকে হাওরের বেশকিছু জমির ফসল হুমকির মধ্যে পড়েছিল। বিশেষ করে মরিচ, বাদাম, ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজির ফসল জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এখন যেহেতু হাওর থেকে পানি নামার রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে, পানিও দ্রুত নামছে আশাকরি ফসলের তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, আমরা জানতে পারলাম যে সিল্লার হাওরের অক্ষয়নগরের বাঁধের কারণে এই হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন যে জলাবদ্ধতায় হাওরের বিভিন্ন ফসলের জমি তলিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাদম, মরিচ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন সবজির জমিতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে এই জমির ফসল গুলো রক্ষা করতে কৃষকদের সাথে কথা বলে আমরা অক্ষয়নগরের বাঁধ কেটে পানি নামার পথ তৈরি করে দিয়েছি৷ পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না বলে আমরা আশা করছি। এতে করে কৃষকদের কষ্টার্জিত ফসল রক্ষা পাবে।

তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এবং আমার কাছে মনে হয়েছে এই জায়গায় বাঁধ না দিয়ে যদি একটি স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হয় তাহলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। স্লুইস গেইট থাকলে যেটা হবে প্রয়োজন মতো হাওরে পানি প্রবেশ ও বের করা যাবে। আর যদি মাটি দিয়ে প্রতি বছর বাঁধ তৈরি করা হয় তাহলে যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হলো এসব মাটি প্রতিবছর পানিতে মিশে নদীতে চলে যাচ্ছে। এতে করে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। সেইজন্যই মূলত এইখানে একটি স্লুইস গেইট প্রয়োজন। এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য স্লুইস গেইট নির্মাণ করার বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রাকিবুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: আল আমিন, সৈয়দ ইমরান হোসেন, দৈনিক ইত্তেফাক’র জেলা প্রতিনিধি বোরহান উদ্দিন, দৈনিক উত্তরপূর্ব’র জেলা প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ প্রমুখ।