জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও হতাশা চরমে
অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৫, ১১:৩৮

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২৩ সেশনে যাত্রা শুরু করা "অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রাম" বর্তমানে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে।
১৬ হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে বাছাইকৃত ১৬০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু হওয়া এই বিশেষ উদ্যোগ কিছুদিনের মধ্যেই প্রশাসনিক জটিলতায় পড়লে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ।
২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক নির্দেশে এই প্রোগ্রাম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৩ মে ২০২৪ তারিখে প্রোগ্রামটি বন্ধের আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয়।
যদিও একই বছরের ১৩ আগস্ট ইউজিসি পুনরায় প্রোগ্রাম চালুর পক্ষে অবস্থান নেয় এবং শিক্ষার্থীদের অন ক্যাম্পাসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে।
সরকার পরিবর্তনের পর নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
এরপর ক্লাস কার্যক্রম চালু হলেও অন ক্যাম্পাস প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৃতীয় ব্যাচ ভর্তি সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ২১ জানুয়ারি ২০২৫ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, প্রোগ্রাম বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহার এবং তৃতীয় ব্যাচ ভর্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত।
কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগপত্র দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে বারবার সময় নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত আসেনি।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, ডরমিটরি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হচ্ছে এবং ডরমিটরিতে তালা লাগিয়ে তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। অথচ ‘জুলাই বিপ্লব’ এর পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা ডরমিটরিতে ওঠে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অমানবিকতা এখন চরমে। আমরা আশ্রয় হারাচ্ছি, পড়াশোনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, অথচ তারা টালবাহানা করে আমাদের দাবিগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে।”
এই অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক দ্বিধান্বয়িতার মধ্যে শিক্ষার্থীরা আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা—না হলে একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগের করুণ পরিণতি অনিবার্য হয়ে উঠবে।