‘জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরীফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের’

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৫, ১২:১২

পাবনা প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

‘ঘটনার দিন জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে সেখানে স্তুপ করা কোরআন শরীফ বা বই পুস্তক কিছু দেখেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এমনকি পরদিন সকাল পর্যন্ত সেখানে নতুন করে আগুন লাগারও কোনো তথ্য তারা পাননি বলে দাবি করেছেন তারা।’’

রোববার (১৮ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবনার আটঘরিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন লীডার মোস্তাফিজুর রহমানের একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত ভিডিওতে আটঘরিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লীডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘গত ১৫ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর আমি দোতলায় আগুন দেখতে পাই। দেখার পর ওখানে প্রচণ্ড ধোঁয়া ছিল। দুইটা রুমে চেয়ার-টেবিল, উপরে আগুন ছিল। ওইটা আমি অতি স্বত্তর নির্বাপন করে চলে আসি। প্রায় ৫ মিনিটের মতো আমরা এই কাজ করছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু এটা গণ্ডগোলের আগুন ছিল। ওটা ছিল জামায়াতের পার্টি অফিস। আমি দেখেছি ওখানে দুইটা রুমের মধ্যে চেয়ার-টেবিল ছিল, ওখানে আগুন ছিল। আগুন নির্বাপন করে আমি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। সেখানে কোরআন শরীফ, ওইরকম স্তুপ করা কোরআন শরীফ বা বই পুস্তক দেখি নাই আমরা। যেহেতু আগুন নির্বাপন করার পরেই চলে আসছি, তাই পরে পুনরায় আর আগুন লাগার কোনো মেসেজ আমরা পাইনি। পরদিন সকাল পর্যন্ত আমরা আর আগুনের কোনো মেসেজ পাই নাই।’

তারপর থেকে ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন তাহলে জামায়াতের অফিসে কোরআন শরীফ পুড়লো কিভাবে? কারাই বা পোড়ালো ? বিএনপি-জামায়াত-ই বা কেন একে অপরকে দোষারোপ করছে। তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে উপজেলা ও জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।

এর আগে শনিবার (১৭ মে) ‘পাবনার আটঘরিয়ায় জামায়াতের কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবে না, জামায়াতের কোনো ঈমাম নামাজ পড়াতে পারবে না' বলে প্রকাশ্যে এমন হুশিয়ারি দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়।

হাবিবের এই বক্তব্যের পরই দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী উপজেলা ও জেলা সদরে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে আটঘরিয়া ফায়ার সার্ভিসের লীডার মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যে নতুন মোড় নিল সেদিনের ঘটনার।

এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, ‘ওই দলের বড় নেতা কি বলেছিলেন? জামায়াতের অফিসে আগুনই লাগেনি। এখন কি হলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন তারা গিয়ে আগুন নিভিয়েছে। আর কোরআন শরীফ না থাকার যে বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের লীডার মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, তাকে আসলে চাপ দিয়ে মিথ্যা কথা বলানো হয়েছে। বিএনপির বড় নেতার চাপে তিনি পড়ে গেছেন বিপদে। অথচ তাকে এখন আর আমরা ফোনে পাচ্ছি না। তার সাথে কথা বলতে পারলে বিষয়টি বুঝতে পারতাম। ঘটনার পর তো এলাকার মানুষ সবাই দেখেছে সেখানে কোরআন শরীফ ছিল কি না।’

উল্লেখ্য, আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রী (অনার্স) কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে গত ১৫ মে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই দলের দলীয় কার্যালয় এবং ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনা উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। জামায়াতের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়।