হাটহাজারীর হালদাপাড়ে নমুনা ডিমের অপেক্ষায় সংগ্রহকারীরা
প্রকাশ | ২০ মে ২০২৫, ১৩:০৬ | আপডেট: ২০ মে ২০২৫, ১৩:৪৭

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আকাশে সকাল থেকেই মেঘের ঘনঘটা। হচ্ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কখনো মেঘের তীব্র গর্জন। এমন আবহাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে নৌকা, বাঁশের ভোরকা রেখে নদী পাড়ে অবস্থান করছেন।
উপজেলার মাছুয়াঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রামদাশহাট, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘাটা, আজিমের ঘাট, পোড় আওলিয়া টেক, কাটাখালির মুখ, বোবাইয়ার চর, গড়দুয়ারা নয়াহাট কেরাংতলি বাঁক এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছেন, কখন ডিম ছাড়ে মা মাছ।
জানা গেছে, পরিবেশ অনুকূলে থাকলেও সব সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে না। একটা নির্দিষ্ট সময় হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। বজ্রসহ বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর নদীর শাখা খালের পানি নদীতে একত্রিত হয়ে পানির তীব্র স্রোত আর ঘুর্ণিয়মান হলেও তখন মা মাছ অল্প অল্প ডিম ছাড়ে যাকে ডিম সংগ্রহকারীদের ভাষায় নমুনা ডিম বলা হয়ে থাকে।
চৈত্র মাস থেকে বিভিন্ন নদ নদী থেকে বড় বড় মা মাছ হালদা নদীতে আসতে শুরু করে। এর পর থেকে পুর্ণিমা এবং অমাবশ্যার বিভিন্ন জো'তে পরিবেশ অনূকুলে হলে মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়।
মৎস্য ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুসারে গত মৌসুমে অল্প পরিমান ডিম ছাড়লেও পরিবেশ অনূকুলে না থাকায় জো'তে পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে অধিকাংশ ডিম সংগ্রহকারীদের মতে জো' সামনে রেখে মা মাছ পুরোদমে ডিম না ছাড়লেও সময়ের শেষভাগ মানে বর্ষা মৌসুমে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছিল।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, এবারের মৌসুমে ডিম ভর্তি মা মাছের আনাগোনা ভালই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে চারদিকে যে হারে মাছ চোরদের হানা তাতেই সন্দেহ জাগে কাঙ্খিত ডিম সংগ্রহ হবে কিনা। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশ এবং প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চললেও এ যেন সবার সাথে মাছ চোরদের লুকোচুরি খেলা চলে।
সম্প্রতি ছিপাতলী অংশে একশ বড়শিসহ এক মাছ চোরকে হাতেনাতে আটক করে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম। উপজেলা প্রশাসন ব্যস্ততার অজুহাতে মোবাইল কোর্টে শাস্তি না দিলেও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামানের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করেন।
ডিম সংগ্রহকারী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের তথ্যমতে প্রশাসনের অভিযান কোন কাজেই আসেনা মা মাছ রক্ষায়। ডিম ছাড়ার মৌসুমে মা মাছ রক্ষায় কঠোর অভিযানের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এবার উপজেলা প্রশাসন অনেকটা নিরব ছিল মা মাছ রক্ষায়। অপরদিকে মৎস্য অধিদপ্তর মাঝে মাঝে অভিযান করে কিছু জাল উদ্ধার করলেও যথাযত নয়।
জানা গেছে, নদীতে অভিযান পরিচালনা করার জনবল সংকটের পাশাপাশি তাদের নেই নিজস্ব কোন স্পিডবোট, নাই আত্মরক্ষা কিংবা অপরাধীদের আটকে কোন গানম্যান। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই তারা বাধ্য হয়ে রাত বিরাতে অভিযানে নামে। তাও নৌ পুলিশ যদি সাথে থাকে। ১০৬ কিলোর হালদা রক্ষা করতে হলে কেবল উপজেলা প্রশাসন কিংবা মৎস্য অধিদপ্তর নয় সবার সমন্বয়ে একটা ট্রান্সপোর্ট গঠন করতে হবে।
এদিকে হালদা প্রকল্প নামে চার বছরের একটি প্রজেক্ট চলমান থাকলেও সেমিনার আর প্রশিক্ষণ ছাড়া তেমন কিছু দৃশ্যমান নাই। মাছুয়াঘোনা, মদুনাঘাট হ্যাচারী সংস্কার চললেও ব্যবস্থা হয়নি নিজস্ব কোন নৌকার। প্রায় সময় মৃত মাছ কিংবা মা মাছ উদ্ধার হলেও তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিজস্ব কোন ল্যাব।