যায়যায়দিনের সংবাদে বদলি হলেও দাম্ভিকতা কমেনি ইউএনও’র

প্রকাশ | ২০ মে ২০২৫, ১৫:২০

বগুড়া প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার ঘটনায়, সাহরিয়ার নামের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৫ই মে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় যায়যায়দিনে। 

সংবাদটি প্রকাশের পরের দিনই বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষনিক এই কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। 

বদলির খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে উপজেলাজুরে খুশির বন্যা বয়ে যায়, বিতরণ করা হয় মিষ্টি, দফায় দফায় খন্ড-খন্ড আনন্দ মিছিলও করা হয়।

এর পরদিন ১৭ই মে সকাল থেকে দফায় দফায় মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসহ বেশকিছু সংগঠন। এসময় তারা বলেন এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে শুধু বদলী করলেই হবেনা, তাকে ওএসডি করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৮ই মে বগুড়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে লিগ্যল পিলিং এন্ড কনসালটেসনের প্রজেক্ট ম্যানেজার কানাই লাল বিশ্বাস সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমারা পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালপুর শাখার অধীনে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় জামথল ঘাট, থানাঃ সারিয়াকান্দি, জেলা বগুড়াঃ অংশের ২ এবং ৩ নং প্যাকেজের কাজ করছি।

 এই কাজের জন্য অফিস আদেশ অনুযায়ী মাটি কাটা এবং ভড়াটের জন্য সাইটে স্কেভেটর রাখি। চলতি বছরের ১৪ মে, দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে, ঘটনাস্থলে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থি হয়। 

এসময় ঘটনাস্থলে কাউেকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমাদের স্কেভেটরটিতে আগুন ধরিয়ে দিতে বলে। বিষয়টি জানার জন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে, তার সাথে থাকা পুলিশদের মাধ্যমে আমাদের হাতে হাত কড়া পড়ায়। 

এবং তাৎক্ষনিক এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে। তার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা উক্ত টাকা পরিশোধ করি কিন্তু তাতেও তিনি ক্ষান্ত হয়না বরং স্কেভেটরের দুটি ব্যাটারী, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র, এয়ার কুলারসহ অন্যান্য মালামাল নিজের হেফাজতে নিয়ে “দেড় কোটি” টাকা মূল্যের স্কেভেটরটিতে প্রেট্রোল ঢেলে আগুন ধরে পুড়িয়ে দেয়। এমন ঘটনায় এই প্রজেক্টের আমরা সাধারণ কর্মচারীবৃন্দ চরম হতাশা ও মানষিক চাপের মধ্যে দিন যাপন করছি।

বদলী আদেশের পর থেকে এই কর্মকর্তা আরোও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মানুষের সাথে দুরব্যবহারের পরিধি আরো বেড়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদেরকে নানাভাবে উক্তিমূলক কথা বলতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন যে, এই বদলী বাতিল করা হচ্ছে, তাকে সরানোর মতো সাধ্য কারো নেই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি লিডারের নাম ভেঙ্গে এমন বড়-বড় গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন। এতে চরম বিরক্তি পোহাচ্ছেন অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উল্লেখ্য এই কর্মকর্তা উপজেলার চারটি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর প্রশাসক ও এ্যাসিল্যান্ড। জুলাই পরবর্তীতে যোগদানের পর থেকে তিনি এতোটাই বেপড়োয়া হয়েছেন যে, সাধারণ মানুষদেরকে মানুষ মনে করছেননা। 

অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথেও একই আচড়ন। এছাড়া অবৈধ্য বালু উত্তোলন, হাট-বাজার, ঘাটসহ বিভিন্ন ঠিকেদারি, অবৈধ্যভাবে গাছ কর্তন, যত্র-তত্র জরিমানার ভয় দেখিয়ে অপরাধীদেরকে নিজের জিম্মায় নিয়ে মাশোহাড়া আদায়ের কৌশল তৈরি, বিভিন্ন সময় অবৈধ্য মালামাল জব্দ করে চেয়ারম্যানের জিম্মায় ও বিভিন্ন স্থানে রেখে কৌশলে  অর্থনৈতিক আতাতের মাধ্যমে পূণরায় ফিরে দেয়াসহ অসংখ্যা অপরাধের সাথে জরিয়ে পড়েন এই কর্মকর্তা।

বদলীর খবরের পর থেকে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে আসলেও, তার হাম্বিতাম্বি কথায় আবারো ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষগুলো। তাদের দাবি এই কর্মকর্তাকে দ্রুত সরিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগুলোর তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।