বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে তীব্র ভাঙন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৫, ১৬:৩৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০২৫, ১৬:৪৪

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের পর জামালপুরের বকশীগঞ্জে দশানী নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনে বসত ভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েকদিন থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বর্ষণে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের পাঁচটি ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

এক সপ্তাহের টানা ভাঙনে অনেক পরিবারই এখন নিঃস্ব। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষেরা। প্রকৃতির নির্মমতায় চোখের জলে ভাসছে ভাঙন কবলিতরা।

নদী ভাঙনে মেরুরচর ইউনিয়নের ঘুঘরা কান্দি, আইরমারী মন্দী পাড়া, উজান কলকিহারা, কলকিহারা ও খাপড়া পাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।

অপরদিকে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী, বাংগাল পাড়া ও বালুগ্রামের ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে।

ইতোমধ্যে মেরুরচর ইউনিয়নের  ঘুঘরা কান্দি বাজার, একটি মসজিদ ও একটি গ্রামীণ রাস্তা নদীতে ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে মন্দী পাড়ায় অবস্থিত এলইজিইডির একটি ব্রিজ, মন্দী পাড়া বাজার ও শত শত বিঘা ফসলি জমি এবং বাড়ি ঘর। 

স্থানীয়দের দাবি, মেরুরচর ইউনিয়নের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করায় নদী দশানী ও শাখা নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দেয়। একারণেই আরও বেশি ভাঙছে আগ্রাসী দশানী নদী। ভাঙনে ভিটা মাটি হারিয়ে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।

স্থানীয়দের দাবি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে অস্তিত্ব হারাতে পারে ভাঙনের শিকার আটটি গ্রাম। তাই অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ ও ডাম্পিং ফেলে এই গ্রাম গুলোকে ভাঙন থেকে রক্ষার দাবি জানান এলাকাবাসী।

ভাঙন কবলিত ঘুঘরা কান্দি গ্রামের কৃষক শের আলী, মোতালেব হোসেন, মকবুল হোসেন বলেন, দশানী নদীর ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। বার বার ভাঙনের ফলে মানচিত্র বদলে যাচ্ছে এই এলাকার। আমরা ভিটা মাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে বিপদের মধ্যে আছি। তাই ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মেরুরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান, ঘর বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শিগগিরই ডাম্পিং করা না হলে এই পাঁচ গ্রামের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আমরা জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সুমন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করতে ত্রাণের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।  

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, মেরুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তা আমরা অবগত হয়েছি। যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  সহযোগিতা করা হবে এবং ভাঙন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া  হবে।