চৌদ্দগ্রামে নির্মাণকাজ শেষ না হতেই ভেঙে পড়ছে আঞ্চলিক সড়ক

মুল সড়কে গাছ রেখেই কাজ শেষ করলেন ঠিকাদার

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৫, ১৫:৪৯

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহেই ভেঙে পড়ছে জশপুর-কাদৈর বাজার সড়ক: ছবি যায়যায়দিন

কাজ শেষ হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ভেঙে পড়ছে পিচ ঢালাই সড়ক, বিভিন্ন অংশে উঠে যাচ্ছে পিচ। সড়কের দুই পাশে ভালোভাবে মাটি না দিয়ে, সড়কের ওপরের গাছ, দেয়াল ও বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ না করে কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। জায়গায় জায়গায় জমছে বৃষ্টির পানি।

দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর পাকা সড়ক নির্মাণে আশার আলো দেখা স্থানীয়রা হয়েছেন হতবাক। নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকৌশলী বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।  

ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ জশপুর-কাদৈর বাজার সড়কে।

জানা গেছে, ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যায় চুক্তিতে ৩১৮০  মিটার সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পায় শুভপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজুমদার ট্রেডার্স। ২০২৪ এর ২৫ আগস্ট শুরু করে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় থাকলেও ঠিকাদার চলতি মাসে কাজ শেষ করেন। 
কাজ শেষের সপ্তাখানেক পর একদিনের বৃষ্টিতে তিন কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ও ভেঙে পড়ে।

সরজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টিতে নবনির্মিত সড়কের দুই পাশে ভেঙে পড়েছে। পিচঢালা সড়কের গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করছেন শ্রমিকরা। পুরো সড়ক জুড়েই এমন ভাঙনের চিত্র।
হাতের স্বাভাবিক টানে উঠে যাচ্ছে পিচ। চাকা চাকা পিচের অংশ হাতে নিয়ে চাপ দিলেই ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে জমেছে বৃষ্টির পানি। 

সড়কের মাঝেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বড় বড় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। সেগুলোর চারপাশ দিয়ে করা হয়েছে পিচঢালাই। সড়ক নিরাপত্তায় সড়কের দু'পাশে ভালোভাবে মাটি দেয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হয়নি তা। সামান্য পায়ের ঘষাতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের পাথর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই এমন নিন্মমানের সড়ক তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় যুবক তারেক জানান, কাজের অনিয়ম দেখে শুরুতেই আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। রাতের অন্ধকারে ড্রাম ট্রাক দিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায় সড়কের দু'পাশের মাটি। দু'পাশে ভালোভাবে মাটি দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো মাটি বিক্রি করায় এমন ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পলাতক, তার লোক আবদুল কাদের নিম্নমানের কাজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছর সড়কের ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত করার দায়িত্ব আমাদের। সড়ক ভেঙেছে, খসে পড়ছে, তা আবার মেরামত করা হবে।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদার এখনো কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। কাজ চলমান। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিল দেওয়া হবে। কাজ বুঝে পাওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত সমস্যা হলে তা সমাধানের দায়িত্ব ঠিকাদারের। 
পাকা সড়কের ভাঙা অংশ মাটি দিয়ে ভরাটের সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।