ভূঞাপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতা নেই
প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৫, ১২:৫৭

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গোবিন্দাসী গরুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতা নেই।
রোববার (২৫ মে) সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দাসী পশুর হাটে বর্তমানে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে রবিবার ও বৃহস্পতিবার বসা এই হাটে এক সময় শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যেত।
গরু-ছাগলের দামদরের আওয়াজে মুখরিত থাকত পুরো হাট প্রাঙ্গণ।কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই অতীত। আগের মতো ভিড় নেই, হাটজুড়ে শূন্যতা। পশুর সংখ্যা কম, ক্রেতা-বিক্রেতা নেই বললেই চলে।
রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক মাস ধরেই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চাপে অনেকেই পশু কেনা থেকে বিরত থাকছেন। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে হাটে সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে না পাওয়ার কারণে অনেকেই এবার পশু নিয়ে হাটে আসতে অনাগ্রহী।
তবে উপজেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও হাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, হাট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে তারা তৎপর। নিয়মিত পশু চিকিৎসক মোতায়েন, জীবাণুনাশক ছিটানো, জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
হাটে আসা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়-তারা গরু নিয়ে এসেছিলো কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে। অপর দিকে ক্রেতাদের মুখে শোনা যায় ভিন্ন গল্প,দাম বেশি হবে ভেবে আগেই তারা কোরবানির পশু কিনতে হাটে এসেছিল কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম বলেন, “পশুর হাটগুলোতে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে আমাদের টহল টিম সাদা পোশাকেও কাজ করছে। আজকের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কম ছিল। তবে সামনের হাটে চাপ বাড়বে। তারা যেন নিরাপদে লেনদেন করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম মোতায়েন আছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা প্রদান ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে পশু কম থাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগও কম পাচ্ছি।”
হাট সংশ্লিষ্ট উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল প্রামাণিক বলেন, “ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হাটের প্রচারণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পলাতক সরকারের আমলে এলাকার প্রভাবশালীদের বাড়তি চাঁদা দিতে হতো, তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ছিলেন অনেকে।
তবে এবার উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় শুধুমাত্র সরকারি ফি দিয়েই পশু কেনাবেচা হচ্ছে। আশা করি সামনের হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়বে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক খায়রুল খন্দকার বলেন, “গোবিন্দাসী হাট শুধু কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। প্রশাসন, হাট কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আবারো হাটের প্রাণ ফিরে আসবে।”