চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আবৃত্তি মঞ্চের উদ্যোগে ১২৬তম নজরুল জন্মজয়ন্তী আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার (২৬ মে) দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল করিব ভবনের ২নাম্বার গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
চবি আবৃত্তি মঞ্চের প্রধান উপদেষ্টা ড. মাছুম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এবং মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী।
আবৃত্তি মঞ্চের সভাপতি তাসলিম হাসান বলেন, ‘এ আয়োজন শুধু একটি দিনকে ঘিরে নয় বরং নজরুলের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে প্রতিদিনের জীবনে তার চেতনা বাস্তবায়নের এক প্রচেষ্টা। আমরা যেন তার কবিতার মতোই বলিষ্ঠ, মানবিক ও মুক্তচিন্তার মানুষ হতে পারি—এই হোক আজকের অঙ্গীকার।’
মুখ্য আলোচক ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, নজরুল যুগের সৃষ্টি নয় বরং তিনি যুগের স্রষ্টা। তার কবিতা সকল প্রকার অনিয়ম, অকল্যাণ, অসত্যের প্রতিফলন। নজরুলের অমর কবিতা বিদ্রোহীর পঙক্তি উল্লেখ করে বলেন তার কবিতা ব্যক্তিমুক্তির চূড়ান্তবার্তা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাছুম আহমেদ বলেন, ভারত উপমহাদেশে সব ধর্মের মানুষের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ইংরেজরা এসে ভারতে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা বিভেদের রাজনীতি শুরু করে। তাদের ডিভাইড এন্ড রোল নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহিত্য অঙ্গন থেকে লড়াই করে গেছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকদের বলতে চাই ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে এদেশকে রক্ষা করতে হবে। ইতিহাস ঐতিহ্য বেঁচে থাকে কবিতা, গান ও লেখনীর মাধ্যমে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কবিতা, গান, উপন্যাসে তুলে ধরতে হবে। ইতিহাস অবিকৃত রেখে গান রচনা করতে হবে। কেননা তা না করলে ইতিহাস বিকৃত হতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকবছর পরে হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জিজ্ঞেস করবে আয়নাঘর কী? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না চাইলে ইতিহাস ঐতিহ্যের চর্চার মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে হবে। আপনি গান, কবিতা ও লেখনীর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে হবে। তাদের সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হলে আপনাদের কাজ করে যেতে হবে। আপনাদের কবিতা, গান, উপন্যাসের মাধ্যমে প্রকৃত ইতিহাস সবার কাছে তুলে ধরতে হবে।’
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল ও মননশীল সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে উৎসাহিত করছে। নজরুল বাঙালি চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে এর প্রতিফলন দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, দীনবন্ধু মিত্র চাইলেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে না লিখে তার গুণগান গাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি লিখলেন নীল দর্পণ। এই কাজের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কতটা নিষ্ঠুরভাবে এদেশের মানুষকে শোষণ করেছে ইংরেজ শাসক শ্রেণি।
পরবর্তীতে আবৃত্তি মঞ্চের সদস্যদের অংশগ্রহণে নজরুলের গান, আবৃত্তি ও নাচ পরিবেশিত হয়।