‘কেএনএফের; ইউনিফর্ম জব্দ: সাবেক এমপির ভাইসহ গ্রেপ্তার ৪
প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০২ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০৫

সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কাপড় সরবরাহের অভিযোগে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন ওয়েল কম্পোজিট নিট লিমিটেড নামের একটি ফেব্রিক্স কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ।
সোমবার (২ জুন) রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সেখান থেকে আবদুচ ছালামের ছোট ভাই তারেকুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
আটক বাকি তিনজন হলেন- প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী ম্যানেজার (মাস্টিং) জামালুল ইসলাম এবং সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার আতিকুর রহমান। পুলিশের ভাষ্য, তারা কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কাপড় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিকবার নয় বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন। সবশেষ তিনি ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
পুলিশ জানায়, ‘চট্টগ্রামে তিন দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের প্রায় অর্ধলাখ ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নামে। কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির কাপড় ওয়েল ফেব্রিকস কারখানায় তৈরি হয়েছিল এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির চার জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু কাপড়ের রোল। যেগুলো দিয়ে কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়। আটককৃতদের চান্দগাঁও থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।’
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমদ জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের জন্য তৈরি ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওয়েল গ্রুপের পরিচালক তারিকুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে দেখানো হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, জব্দ করা পোশাকগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের ইউনিফর্ম। মহালাসিন মারমা নামের এক ‘সন্ত্রাসী’ ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরি করতে দিয়েছিলেন।
এর আগে ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।
ফেসবুকে পেজ খুলে দু-তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কেএনএফ। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। সংগঠনটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার। পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।