লাম্পি স্কিন ডিজিজ আতঙ্কে খামারিরা

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০৬

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
গবাদিপশুর মাঝে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় আতঙ্কিত খামারিরা।

আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার অসংখ্য খামারি গবাদিপশু মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু গবাদিপশুর মাঝে আশঙ্কাজনক হারে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় আতঙ্কিত খামারিরা।

বিগত বছর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু ও বাছুরের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। কোরবানিযোগ্য পশুর শরীরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, সাধারণত এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। অস্বভাবিক গরম ও মশা-মাছির বংশ বিস্তারের ফলে এই ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীর প্রথমে গরম হয়ে জ্বর উঠে যায়। তারপর শরীরের কয়েক জায়গায় ছোট ছোট গুটি উঠতে শুরু করে। যা একপর্যায়ে ধীরে ধীরে সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়া শুরু হয় এবং গরুর খাবারে অনীহা দেখা দেয়। ফলে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিন্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপর এ রোগের প্রভাব পড়ার ফলে গবাদিপশু মারাও যায়।

সরেজমিনে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহালিয়া গ্রামের নুরুচ্ছফা এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ওই খামারে ২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু, ৬টি গাভি ও ৫টি বাছুর রয়েছে। তারমধ্যে ১টি বাছুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়েছে। খামারের মালিক স্থানীয় পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে বাছুরটিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছেন। ভ্যাকসিন প্রয়োগের সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত বাছুরটি পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।

নুরুচ্ছফা এগ্রো ফার্মের মালিক মো. নুরুচ্ছফা বলেন, আমার খামারের একটি বাছুরের শরীরের কয়েক জায়গায় হঠাৎ করে ছোট ছোট গুটি উঠতে শুরু করে। কয়েকদিন পর ছোট ছোট গুটিগুলো বড় হয়ে সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমি আতঙ্কিত হয়ে স্থানীয় এক পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। পরে তিনি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর বাছুরটি আগে থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বাছুরের এমন অবস্থা হয়েছিল আমি মনে করেছিলাম বাছুরটি মারা যাবে। এ রোগ খামারের অন্য গরুগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আমি বর্তমানে আতঙ্কিত বোধ করছি।

মমতাজ ডেইরি ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের খামারের আশেপাশের বেশ কয়েকটি খামারে এ রোগ দেখা দিয়েছে। আমাদের খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২০টির মতো গরু আছে। এ রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ার আগেই আমরা সবগুলো গরুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছি। যদি এ রোগ আমাদের খামারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

সাতকানিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে গবাদিপশুর মাঝে এলএসডি রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিগত পাঁচ মাসে শুধুমাত্র সাতকানিয়া উপজেলায় ৭০ থেকে ৭৫টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বর্তমানে আমাদের কাছে এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে নিয়মিত এ রোগের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।