গাজীপুরে মহাসড়কে গাড়ি সংকট, ট্রাকই ভরসা

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৫, ১০:১৯

গাজীপুর প্রতিনিধি
যায়যায়দিন

ঈদের একদিন আগে শুক্রবার সকালে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। ফলে মানুষের তুলনায় বাস সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ঘরমুখো মানুষের এখন শেষ ভরসা এখন ট্রাক, পিকআপসহ ছোট যানবাহন। 

এসব যানবাহনে যেতে গিয়ে দ্বিগুন তিনগুন বা তারচেয়েও বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে বড় রকমের ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
  
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্ত ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অনেকে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তারা বাসে উঠতে পারছেন না। 

কারণ বাসে কোন সিটই খালি নেই, লোকে ঠাসা। স্থানীয় পোশাক শ্রমিক জাহানারা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তাদের বেতন-বোনাস হয়েছে। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় গ্রামের বাড়ি রংপুরে যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু সাড়ে ৮টায়ও তারা বাসে চড়তে পারেননি। তাই তারা পাশের পেয়ারা বাগান এলাকা থেকে ৮শ’ টাকা ভাড়ায় ট্রাকে উঠেছেন।
 
একই কথা জানিয়েছেন স্থানীয় পোশাক কারখানার শ্রমিক দম্পতি সানোয়ার হোসেন-জাহানারা বেগম। তারা জানান, চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় কিশোরগঞ্জ যাওয়ার জন্য শুক্রবার ৭টা থেকে বাসের অপেক্ষা করছেন তারা।  সকাল ৯টায়ও তারা বাসে উঠতে পারছেন না। বিকল্প যান সিএনজি চালিত অটোতে যেতে গেলে দুইশ/ আড়াইশ’ টাকার ভাড়ার স্থলে ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া চাচ্ছে অটো চালকেরা। শেষে ৫শ’ টাকায় পিকআপে উঠেছেন তারা। তারা জানান, পাশে ডিউটিতে থাকা পুলিশকে জানিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে পিকআপে উঠেছেন। তাদেও মতো শত শত যাত্রী এমন ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।  

সড়কে এসে গাড়ির জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহন সংকট চরমে। এতে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টও মো. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় একটি লরি বিকল পয়ে পড়লে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয় প্রায় এক ঘন্টা পর লরিটি উদ্ধার করলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে এর এক ঘন্টা পরও গাড়ির চাপ কমেনি। এদিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে কারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।   
সরেজমিন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দেখা যায়, গাড়ি না থাকায় হাজার হাজার যাত্রী সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, পশুবাহী ট্রাক পিকআপে বাড়ি ফিরছেন।

কালিয়াকৈর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার পোশাক শ্রমিক অনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ‘‘কারখানা ছুটি হয়েছে দুপুরে। এরপর শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় চন্দ্রায় যাই৷ সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার যাত্রী। কোন বাস-গাড়ি খালি নেই। কখন বাস পাব আর কখন বাড়ি পৌঁছব জানি না।’’

নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার ‘‘দুপুরে কলকারখানা ছুটির পর বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় ও সফিপুর এলাকায় যাত্রীদের ঢল নামে। শুক্রবার সকালেও একই অবস্থা চলছে। যানবাহন সঙ্কটে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।’’